বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্রায় দুই মাস পর হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সিসিইউ থেকে কোনো রোগীকে কেবিনে স্থানান্তর সাধারণভাবে অবস্থার উন্নতি নির্দেশ করলেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে দাবি করেছেন তার চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
সেদিন প্রথমে তাকে কেবিনে ভর্তি করা হলেও দ্রুতই সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তার লিভার সিরোসিতে আক্রান্ত হওয়ার খবরও জানানো হয়।
৫৭ দিন পর গতকাল রবিবার (৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় তাকে কেবিনে আনা হয় বলে জানান ডা. জাহিদ।
তিনি বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে ম্যাডামকে কেবিনে আনা হয়েছে। কেবিনে সিসিইউ’র সকল সুবিধাদি রাখা হয়েছে এবং সিসিইউ’র নার্সরা কেবিনে তার সেবায় নিয়োজিত থাকছেন।”
খালেদার চিকিৎসায় বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে যে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড রয়েছে ডা. জাহিদও তাতে রয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তার অবস্থা আগের মতোই আছে। সবগুলো প্যারামিটার আগের মতোই উঠানামা করছে।”
খালেদা জিয়ার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন উল্লেখ করে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
তবে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যে শর্তে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দুই বছর আগে তার বাসায় উঠেন সেই শর্তে তাকে বিদেশ পাঠানোর সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
খালেদার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বোনকে বিদেশ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পঞ্চম দফা আবেদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরে নতুন আবেদন করতে হবে।”
এদিকে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার দাবিতে এখন জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএনপি।
খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায়ও তার সাজা হয়।
পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি বন্দি থাকেন দুই বছর। এই সময়ে কিছুদিন চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতেও ছিলেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয় সরকার। কারাগারে থেকে ছাড়া পেয়ে গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় উঠেছিলেন তিনি।
মুক্ত হওয়ার পর কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। তখন কিছুদিন হাসপাতালে থেকে বাসায়ও ফিরে গিয়েছিলেন।
আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ নভেম্বর তাকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।