বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা একটু স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতা মির্জা আব্বাস। রাজধানীর মালিবাগে জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় আছে। আপনাদের দোয়ায় হয়তো আজকে একটু স্ট্যাবল হয়েছেন খবর পেয়েছি।
এদিকে বাংলাদেশের কয়েকটি টেলিভিশনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, তার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে এবং রিপোর্ট স্বাভাবিক। মেডিকেল বোর্ডের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রচার করেছে টেলিভিশনগুলো। খবর বিবিসি বাংলার।
কাল সকালে নামার অনুমতি পেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স : বিডিনিউজ জানায়, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে, সেটি আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার অনুমতি পেয়েছে। দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা গতকাল রোববার এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, জার্মানভিত্তিক এয়ারলাইন্স এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপ শনিবার তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যে আবেদন করেছিল তাতে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় নামার সূচি দেওয়ার তথ্য দেন তিনি। সেটি চাইলে সেদিন রাত ৯টায় ঢাকা ত্যাগ করতে পারবে, সেভাবে আপাতত সময় দেওয়া হয়েছে।
এর আগে শনিবার এফএআই অ্যাভিয়েশন গ্রুপ যে আবেদন করেছিল তাতে আগামীকাল ঢাকায় অবতরণ এবং পরের দিন বুধবার লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার সূচি চাওয়া হয়েছিল। তবে এ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসা ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে লন্ডনের পথে রওনা হওয়ার পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শুক্রবার ভোরের দিকে লন্ডনের পথে রওনা হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল দলের তরফে। পরে কারিগরি ত্রুটির কারণে সেই অ্যাম্বুলেন্স আসতে বিলম্ব হওয়ার কথা জানায় দলটি।
এরপর শুক্রবার বলা হয়, কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আর আসছে না। সেটির বদলে কাতারের আমির জার্মানি থেকে ভাড়া করে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাবেন। সেই অ্যাম্বুলেন্স কবে আসবে কিংবা খালেদা জিয়াকে কবে লন্ডনে নেওয়া হবে, তা বিএনপির তরফে এখনও জানানো হয়নি।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তরফে শনিবার বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো বিমানযাত্রার সক্ষমতা অর্জন করেননি। সেজন্যই তার লন্ডনযাত্রা বিলম্ব হচ্ছে। তবে খালেদা জিয়া ৯–১০ ডিসেম্বরের দিকে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন বলে এদিন আভাস দেন এক চিকিৎসক। সেই আভাসের মধ্যে এবার ৯ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির ঢাকায় আসার আবেদনের খবর এলো।
ঢাকায় কাতার দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির নুরেমবার্গভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। এটি বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার (সিএল– ৬০) সিরিজের দুই ইঞ্জিনের জেট উড়োজাহাজ। এতে অ্যাম্বুলেন্সের যাবতীয় সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
সিরিয়াল নম্বর বলছে, উড়োজাহাজটি প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ২০১৮ সালে। ইউরোপের বিজনেস জেট, ভিআইপি চার্টার উড়োজাহাজ ও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবাদানকারী কোম্পানি এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভেন্টিলেটর, মনিটরিং ইউনিট, ইনফিউশন পাম্প, অঙিজেন সরবরাহ, ওষুধপত্র এবং চিকিৎসা সামগ্রীসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। উড়োজাহাজটিতে থাকবেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিকস, যারা আকাশপথে নেওয়া রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান রাখেন।
এর আগে গেল জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেবার তিনি গিয়েছিলেন কাতারের আমিরের ব্যক্তিগত বহরের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে।
খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি।












