খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত

ডাকলে মাঝেমধ্যে সাড়া দিচ্ছেন

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রোববার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের কাছ থেকেই আমি শুনেছি যে, উনার শারীরিক অবস্থা অবনতিশীল হয়নি। তাই বলে খুব একটা উন্নতি হয়েছে এ রকম খবরও পাইনি। তার মানে উনার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৩ নভেম্বর রাতে তাকে ঢাকার বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষানিরীক্ষায় বুকে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে খালেদা জিয়া চিকিৎসায় রেসপন্স করছেন বা সাড়া দিচ্ছেন বলে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের একটি সূত্র বলছে, ডাকলে মাঝেমধ্যে সাড়া দিতে শুরু করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা খালেদা জিয়া। এ পরিস্থিতিকে চিকিৎসকরা গত তিন দিনের চেয়ে আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার।

বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সংকটময়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সার্বিকভাবে তার শারীরিক সুস্থতা এবং মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের ওপর।

তার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে রিজভী গতকাল বলেন, আমরা মনে করি যে, দ্রুতই তিনি সেরে উঠবেন, উনি আরোগ্য লাভ করবেন, উনি সুস্থ হয়ে উঠবেনএটাই কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশা।

রিজভী বলেন, তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন, চিকিৎসার সবকিছু সমন্বয় করছেন। তার মায়ের জন্য, আমাদের চেয়ারপারসনের জন্য তিনি উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন। আমি যতটুকু জানি, প্রতি মুহূর্তে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে তিনি সবসময় কথা বলছেন এবং তাকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার শারীরিক অবস্থা কখন কীভাবে হবে, এ নিয়ে আমি বলব যে, উনি ঘুমানোর সময় পান কিনা সন্দেহ রয়েছে। এত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে তাকে কাটতে হচ্ছে।

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় লন্ডন ক্লিনিকে তার চিকিৎসা চলে।

রিজভী বলেন, লন্ডন ক্লিনিকের ডাক্তার যারা রয়েছেন, ইংল্যান্ডের সেই হাসপাতালে ম্যাডাম চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের সাথে তিনি (তারেক রহমান) যোগাযোগ করছেন, কথা বলছেন এবং প্রতিনিয়ত এখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে তিনি কথা বলছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দলের নেতাকর্মীদের ভিড় না করার অনুরোধ জানান রিজভী।

ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। তখনো শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তখনো তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিল।

এর আগে থেকেই তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিংও পরানো হয়েছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের জুনে পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে।

আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত। তারপর থেকে প্রথমে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দুর্নীতির আরেকটি মামলাতেও তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারেক ফিরতে চাইলে একদিনের মধ্যে পাস দেওয়া হবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধবিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস : কমিশন