খালেদার লন্ডনযাত্রা কাল

তারেক রহমানের বাসায় কয়েকদিন থাকার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে

| সোমবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সব প্রস্তুতি শেষে খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন আগামীকাল মঙ্গলবার। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সেদিন রাতে রওনা হবেন তিনি। বিদেশে যাওয়ার দিনক্ষণ এগিয়ে আসার মধ্যে গতকাল রোববার রাত ৯টায় গুলশানে তার বাসা ফিরোজায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

ফিরোজা থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার দিনক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির এক নেতা বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতার খবর জেনে তাকে লন্ডনে নিয়ে যেতে তার রাজকীয় বহরের এ বিশেষ উড়োজাহাজ দিয়েছেন। এতে সর্বাধুনিক চিকিৎসার অনেক সুবিধা রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আগামীকাল রাতে প্রথমে লন্ডনে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যাবেন। ছেলের বাসায় কয়েকদিন থাকার পরে বিএনপি চেয়ারপারসন লিভারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী, জনগণের সবচেয়ে আদরের নেত্রী চিকিৎসার জন্য ৭ জানুয়ারি রাতে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সেই কারণে আমরা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সব সদস্য এসেছিলাম শুভেচ্ছা জানাতে। আমরা তার সঙ্গে আলাপ করেছি, কথা বলেছি। আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছি, তাকে সুস্থ করে আবার যেন আমাদের মাঝে, দেশের মানুষের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

কবে নাগাদ খালেদা জিয়া ফিরবেন জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তো চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। আমরা তো বলতে পারি না। আমরা আশা করি উনি চিকিৎসা শেষে শিগগির দেশে ফিরে আসবেন।

গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করতে বলেছেন : দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় খালেদা জিয়ার নির্দেশনা কিংবা বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম নির্দেশনা দিয়েছেন, এক সঙ্গে কাজ করো, জনগণের পক্ষে কাজ করো, গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করো।

রাত ৯টায় ফিরোজায় একে একে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হেসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বের হয়ে আসার পর দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ফিরোজায় খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন। এর আগে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন।

বিদেশে চিকিৎসা নেবেন কোথায় : দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে গত কয়েক বছর থেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা ও বিএনপি। তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন। তখন বিশেষ শর্তে তাকে গুলশানের বাসায় থাকতে দেওয়া হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত কয়েক বছরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে কয়েক দফায় ভর্তি করা হয়। পরে ছাত্রজনতার আন্দোলনে সরকার পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। এরপর আর কোনো বাধা না থাকায় আবার তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

মুক্তির পরপরই তার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের জন্য উপযোগী না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শের ভিত্তিতে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তার লন্ডন যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়। তারেক রহমানের বাসায় কিছুদিন থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সেখানে মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটালের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি কেয়ার ইউনিটে লিভার ট্রান্সপারেন্টের চিকিৎসা নেবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা দলের সদস্যরা বলেছেন, এরই মধ্যে তার যাবতীয় চিকিৎসার কাগজপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট সেখানে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওই হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিসটিপস সম্পন্ন করেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভার ট্রান্সপারেন্ট চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণমাধ্যমে রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা দরকার
পরবর্তী নিবন্ধসমবায় সমিতির নারী কর্মীর আত্মহত্যা নিয়ে যা জানা গেল