জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আপিল বিভাগ। আগের দুই রায় বাতিল করে বর্তমান আপিল বিভাগ বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অতীতের বিচারে আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ এই মামলায় ছিল, তা অতীতের আপিল বিভাগ সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে এ মামলায় অতীতের রায়ে ‘গ্রস মিসক্যারেজ অব জাস্টিস’ অর্থাৎ বিচারের নামে ব্যাপক অবিচার হয়েছে। এটিএম আজহারুল ইসলামের আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে এ মামলায় ‘গ্রস মিসক্যারেজ অব জাস্টিস’ হয়েছে।
রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলেন আজহারুল ইসলামের আইনজীবী শিশির মনির জানান, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণ এসেসমেন্ট করা ছাড়াই আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। পর্যবেক্ষণে এ বিষয়টি উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেছে পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ট্রাভেস্টি অব ট্রুথ অর্থাৎ বিচারের নামে অবিচার।
যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থিত করা হয়েছিল অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই আইনজীবী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার চলাকালে যেসব সাক্ষ্য–প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো পরবর্তীতে আপিল শুনানির সময় বিবেচিত হয়নি বলে জানান আইনজীবীরা। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অতীতের রায়ে সাজা দেয়া হয়েছিলো বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি জানান, এ মামলায় যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তাতে সাক্ষীরা আদালতে এসে বলেছেন কেউ ৩ কিমি কেউ ৬ কিমি দূর থেকে আজহারুল ইসলামকে দেখেছেন। একজন সাক্ষীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার সন্তানের নাম কি, ছেলেমেয়ের নাম বলতে পারে না। স্ত্রীর নাম বলতে পারে না কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম বলতে পারে, বলেন শিশির মনির। তিনি বলেন, আগের রায়ে যে সমস্ত ফাইন্ডিং ছিলো, এই মিথ্যা সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে যে সমস্ত সাজা দেয়া হয়েছিল আজকের এ রায়ে সবই অসত্য প্রমাণিত হলো এবং তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হোল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত এ মামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইনের একটা ট্রায়াল। আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক জানান, এটা যে ইন্টারন্যাশনাল ল’য়ের একটা ট্রায়াল। এখানে যে ইন্টারন্যাশনাল ল কন্টিনিউ করা উচিত ছিল সেটা এখানে হয়নি.. বলেছে আদালত। অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি বদলে দেয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল, উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির।