খাবার নেই আশ্রয় নেই, কলেরার শঙ্কা

| শনিবার , ২৫ জুন, ২০২২ at ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

আফগানিস্তানের দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন জানিয়েছে, তাদের খাওয়ার মতো কিছু নেই, কোনো আশ্রয় নেই এবং তারা কলেরার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন। দেশটির পাকতিকা প্রদেশ থেকে বিবিসির প্রতিনিধি এমনটি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে এই প্রদেশটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

নিজের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে এক জোড়া জুতা পেলেন আগা জান, সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ পানিতে ভরে গেল। জুতা জোড়া থেকে ধূলা সরাতে সরাতে বললেন, এগুলো আমার ছেলের জুতা।

তার অল্প বয়স্ক তিন সন্তান ও দুই স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে, ভূমিকম্পের সময় তারা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বুধবার ভোররাতে যে ঘরে তারা ঘুমিয়ে ছিলেন ভূমিকম্পের পর আগা জান সেদিকে দৌঁড়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে সবশেষ। সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিল। এমনকি আমার বেলচাটাও। আমার কিছুই করার ছিল না। আমি চাচাতো ভাইদের ডেকে আনি, সবাই মিলে আমার স্ত্রী, সন্তানদের বাইরে বের করে আনি, কিন্তু তারা বেঁচে ছিল না।

আগা জানের গ্রামটি যে এলাকায়, পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলা, ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি। এই ভূমিকম্পে প্রায় ১০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং ৩ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে।

এখান থেকে ধূলিময় রাস্তা পেরিয়ে সবচেয়ে নিকটবর্তী বড় শহরে গাড়িতে করে যেতে তিন ঘণ্টা লাগে, এলাকাটি প্রত্যন্ত হওয়ায় এখান থেকে আহতদের নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তবে এখান থেকে তালেবানের সামরিক হেলিকপ্টারে করে কিছু্‌ আহতকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এই গ্রামের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ি যেগুলো সাধারণভাবে মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক পরিবারের কেউ না কেউ মারা গেছে।

ভূমিকম্পের খবর যখন পান তখন হাবিব গুল প্রতিবেশী পাকিস্তানের করাচি শহরে, সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তড়িঘড়ি করে বারমালের গ্রামের বাড়িতে ফিরে দেখেন তার ২০ জন আত্মীয় নিহত হয়েছে, এদের ১৮ জন এক বাড়ির বাসিন্দা। হাবিব বলেন, কার নাম আমি বলবো আপনাকে? আমার এত আত্মীয়স্বজন শহীদ হয়েছে, তিন বোন, আমার ভাতিজি, আমার কন্যা, ছোট শিশু। বিবিসিকে তিনি বলেন, বিশ্ব যদি ভাইয়ের দৃষ্টিতে আমাদের দেখত আর সাহায্য করত, আমরা এখানে আমাদের নিজেদের জায়গায় থাকতে পারতাম। তারা যদি সাহায্য না করে তাহলে কান্না নিয়ে দীর্ঘদিনের এই বাসস্থান ছেড়ে যেতে হবে আমাদের।

মাথার ওপর আকাশে সামরিক হেলিকপ্টার ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা আর আহতদের নিয়ে যাচ্ছে না, ত্রাণ সাহায্য সরবরাহ করছে। তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযান সম্পূর্ণ ও শেষ হয়েছে। এখন ঘরবাড়ি হারানো শত শত পরিবারের জন্য জরুরিভিত্তিতে আশ্রয় দরকার।

আগা জান ও তার বেঁচে থাকা ছেলেদের একজন খোলা জায়গায় কাঠ দিয়ে বড় একটি তেরপল টাঙাচ্ছিলেন। অন্য পরিবারগুলো তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির অবশিষ্টাংশ দিয়ে কোনোরকমে মাথা গোঁজায় একটি ঠাঁই করে তাতেই আশ্রয় নিয়েছেন।

খালিদ জানের পাঁচ নাতি তার পাঁয়ের কাছে জড়ো হয়ে আছে। ওদের বাবা, তার ছেলে, ভূমিকম্পে মারা গেছে। এখন তিনিই ওদের একমাত্র অবলম্বন। ভূমিকম্পে খালিদ জানের আরও দুই সন্তানও মারা গেছে। একটি তাঁবুতে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বিছানা চারপাইতে বসে তিনি বলেন, এদের শুধু আমিই আছি। কিন্তু বাড়িসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে আর আমি এটি আর তৈরি করতে পারবো না। আফগান ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করে রসদ সরবরাহ করলেও এটি বড় ধরনের একটি সংকট যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এ সংকট আগে থেকেই দেশটিতে বিদ্যমান থাকা ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। এখানে অসহায় অবস্থায় পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো জাতিসংঘ সম্ভাব্য কলেরা প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরায়েলি সেনাদের গুলিতেই নিহত হন সাংবাদিক শিরিন : জাতিসংঘ
পরবর্তী নিবন্ধলা লিগায় প্রথম এলক্লাসিকো বার্নাব্যুতে