খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বন্যপ্রাণী, আতঙ্ক

ঘটছে হতাহতের ঘটনা, অভয়ারণ্য রক্ষায় প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ১৯ জুলাই, ২০২৫ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা, রিজার্ভ ফরেস্ট ও উপকূলীয় বন উজাড়সহ নানা প্রতিকূলতায় হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাবারের সন্ধানে বন্যপ্রাণীরা প্রায়ই লোকালয়ে চলে আসছে। বৈচিত্র্যময় মীরসরাইয়ের পূর্বপাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাহাড়, পশ্চিমে সুন্দরবন খ্যাত ম্যানগ্রোভ বন। কিন্তু মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে প্রায় ৮০ ভাগ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এতে বিচরণক্ষেত্র হারিয়েছে বন্যপ্রাণীরা। মানুষের পদচারণা, শিল্পকারখানা নির্মাণ, ঝড়জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবসহ নানা কারণে লোকালয়ে ছুটে আসছে বন্যপ্রাণীর দল। উপজেলার সাহেরখালী থেকে মুহুরি প্রকল্প পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের উপকূলীয় বন আর এখন নেই। এক সময় উপজেলার ডোমখালী, গজারিয়া এলাকার বনে হরিণসহ নানা প্রাণীর পাশাপাশি ছিল পরিবেশ সহায়ক নানা প্রজাতির বৃক্ষ।

এদিকে গত বুধবারও মীরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়নের ভূঁইয়া গ্রামে চিতাবাঘসদৃশ প্রাণীর উপস্থিতিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণীটি গর্জন ও চলাফেরা বাঘের মতো হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে গ্রামবাসী। পরে জানা গেছে এটি প্রকৃতপক্ষে একটি মেছোবাঘ। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দক্ষিণ ভূঁইয়া গ্রাম এলাকার পুরাতন ঈদগাঁ কবরস্থানে বেশ কিছুদিন ধরে এ প্রাণীর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে দুটি বাচ্চাও রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মানুষের ওপর কোনো আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকবার গরু ও ছাগলের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেছে।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা রায়হান উদ্দিন জানান, দক্ষিণ ভূঁইয়া গ্রামের ঈদগাহ কবরস্থানে দুটি বাঘের বাচ্চার মতো দেখা গেছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে মীরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফুর বলেন, বিষয়টি এখনও কেউ আমাদের জানায়নি। সাধারণত এসব বন্যপ্রাণী সহজে কাউকে আক্রমণ করে না। যদি না তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

স্থানীয়রা জানান, শিল্পাঞ্চলের জন্য এখানকার ২৬ হাজার একর সংরক্ষিত বন উজাড় হওয়ায় খাদ্য ও পানির সংকটে লোকালয়ে ছুটে আসছে মায়া হরিণ। ফলে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সমপ্রতি উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের মঘাদিয়া ঘোনা এলাকায় বেড়িবাঁধে গাড়িচাপায় দুটি হরিণ মারা যায়। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ি চাপায় হরিণ দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে হরিণ দুটি উদ্ধার করে মাটিচাপা দেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২৮ জুন দুপুরেও সীতাকুণ্ডে লোকালয়ে চলে আসে একঠি মেছোবাঘ। ধাওয়া দিতেই এটি লাফিয়ে জামগাছের মগডালে উঠে পড়ে। পরে সেখান থেকে লাফ দিয়ে বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর পাড়ের গাছে চলে যায়। এলাকাবাসী ফের ধাওয়া দিলে মেছোবাঘটি পরিষদের পুকুরে লাফিয়ে পড়ে। পরে পুকুরে জাল মেরে এটিকে ধরা হয়। উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের রঙ্গীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে প্রায়ই অজগর, বানর ইত্যাদি প্রাণী চলে আসছে লোকালয়ে। দুবছর আগে ধানি জমিতে মেছোবাঘের বাচ্চা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মীরসরাইয়ের চরশরৎ এলাকায় খামারবাড়িতে। মীরসরাই উপজেলার বনাঞ্চলে এক সময় লজ্জাবতী বানর, শকুন, মেছোবাঘ, গুইসাপ, শিয়াল, বন্যমোরগ, বাঘডাসের দেখা মিললেও এখন প্রায় হারিয়ে গেছে। মীরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, দিনে দিনে খাবারের সন্ধানেই বন্যপ্রাণীরা এভাবে ছুটে আসছে। অভয়ারণ্য রক্ষায় আরো কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমসজিদের মাইক নামাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, খতিবের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কে নতুন সম্ভাবনা