খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) একটি মূল্যবোধ ও আদর্শকে প্রতিনিধিত্ব করেন

১৫২তম জন্মবার্ষিকীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সেমিনারে আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, আমাদের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে যা উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের অন্তরে এক শান্ত, কিন্তু শক্তিশালী তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আমরা সাহস পাই, আমরা অনুপ্রাণিত হই। হযরত শাহ ছুফী খানবাহাদুর আহছানউল্লা (.) এমনই একটি নাম, যা একটি মূল্যবোধ, একটি দর্শন, একটি আদর্শকে প্রতিনিধিত্ব করেন।

গতকাল শনিবার নগরীর হোটেল আগ্রাবাদের কর্ণফুলী হলে হয়রত শাহ ছুফী খানবাহাদুর আহছানুল্লার (.) ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশন এ সেমিনারের আয়োজন করে। এম এ মালেক বলেন, ‘আহছান’ শব্দের বেশ কয়েকটি অর্থ আছেসুন্দর, মহৎ, অনুগ্রহ, উৎকর্ষ। খানবাহাদুর আহছানউল্লার (.) জীবনের সাথে প্রতিটি অর্থই মিলে যায়। তাঁর চরিত্র, তাঁর সুবিশাল কর্মকাণ্ড, তাঁর সততা, তাঁর আধ্যাত্মিকতাসব মিলিয়ে তিনি এই নামটির প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তাঁর নীতি ও আদর্শ দিয়ে আমাদের শিখিয়ে গেছেন, যদি সত্যিই নিজের মূল্য খুঁজতে চাও তবে অন্যের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দাও। তিনি আমাদের বলে গেছেন, মনে রাখবে, এই পৃথিবী আমাদের কর্মক্ষেত্র। যা কিছু এখানে অর্জন করবে তাই পরলোকের পুঁজি হবে। যিনি এখান থেকে খালি হাতে যাবেন তিনি সেখানেও রিক্ত হস্তে থাকবেন।

তিনি বলেন, আমরা নিজেদের জন্য যা করি তা আমাদের সাথে সাথে হারিয়ে যায়। কিন্তু অন্যের জন্য এবং পৃথিবীর জন্য যা করি, তা থেকে যায়। হযরত শাহ ছুফী খানবাহাদুর আহছানউল্লার (.) জীবন এই কথারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি নিজের কর্মকাণ্ডে আমাদের শিখিয়ে গেছেন আমরা কী পেয়েছি তা দিয়ে জীবন অর্থবহ হয় না। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের জন্য, মানবতার জন্য কতটুকু করতে পেরেছি, সেটাই আমাদের সাফল্যের মাপকাঠি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন হোটেল আগ্রাবাদের পরিচালক ও চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশনের সহসভাপতি শাকিল নওয়াব আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব গোলাম ওয়ারেছ মুক্তা। প্যানেল আলোচক ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ও বোয়ালখালীর শাওয়াতলী পূর্ণচন্দ্র সেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান। মুক্ত আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী সদস্য ড. এহছানুর রহমান। উপস্থাপনায় ছিলেন খানবাহাদুর আহছানউল্লা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, নৈতিকতার বাতিঘর খ্যাত ছিলেন হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (.)। তিনি উপমহাদেশের এক বিরল প্রতিভাধর ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, সুফি সাধক, মানবসেবক, সাহিত্যিক ও সামাজিক সংস্কারক ছিলেন।

শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা প্রশাসনে হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লা (.) ছিলেন প্রথম দিকের উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম কর্মকর্তা। একই সাথে চট্টগ্রামসহ সমগ্র অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা বিস্তার, মাদ্রাসাসাধারণ শিক্ষার সমন্বয়, শিক্ষক কল্যাণ এবং গবেষণাসাহিত্যে তার দৃষ্টান্তমূলক অবদান আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী সদস্য ড. এহছানুর রহমান বলেন, হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লার (.) প্রতিষ্ঠিত আহছানিয়া মিশন আজ দেশে ও বহির্বিশ্বে প্রায় ২০০টির বেশি শাখার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দাতব্য কার্যক্রম ও নৈতিকতা গঠনে কাজ করে চলেছে।

স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ওয়ারেছ মুক্তা বলেন, সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লার (.) জীবনের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত।

অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান বলেন, হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লার (.) জন্ম খুলনার সাতক্ষীরার নলতা এলাকায়। অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। তিনি ১৯০৭ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল ইন্সপেক্টর অব এডুকেশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় গঠন ও উন্নয়ন কাজে ভূমিকা, গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলের উন্নয়নে ভূমিকাসহ চট্টগ্রাম বিভাগে অসংখ্য স্কুলকলেজ, মাদ্রাসা, হোস্টেল প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।

সভাপতি হোটেল আগ্রাবাদের পরিচালক ও চট্টগ্রাম আহছানিয়া মিশনের সহসভাপতি শাকিল নওয়াব আলী বলেন, এ সেমিনারের উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত খানবাহাদুর আহছানউল্লার (.) জীবন, কর্ম, শিক্ষাসংস্কার, তরিকতদর্শন, মানবসেবা আন্দোলন এবং সাহিত্যে তার অবদানকে নতুন প্রজন্ম, গবেষক ও সমাজের নেতৃত্বশীল শ্রেণির সামনে উপস্থাপন করা, যাতে তার কর্মধারা ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউএসটিসিতে আইকিউএসির সেমিনার
পরবর্তী নিবন্ধখরনদ্বীপে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন