সরকার ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে ১ লাখ টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ চাল কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৪২৩ কোটি ৭৬ লাখ দুই হাজার ৭৫০ টাকা। প্রতিকেজি চালের দর পড়বে ৪২ টাকা ৬৮ পয়সা। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, বেসরকারি উদ্যোগে চাল আমদানির পরে এবার সরকারের পক্ষ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। বুধবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারতের মেসার্স বাগাদিয়া, ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর এ চাল কিনবে। এ ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কিনতে মোট খরচ হবে ২১০ কোটি ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। অপরদিকে, সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বলা জরুরি যে, চাল আর আটার বাজার অস্থির থাকলে নিম্ন–আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। গত কয়েক বছরে চাল–আটার দাম বাড়ার কারণে নিম্ন–আয়ের মানুষের এ কষ্ট আরও বেড়েছে। যেহেতু বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম গরিব মানুষের নাগালের বাইরে, সেহেতু চালের বাজার যাতে অস্থির না হয় সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।
চালের বাজারে সংকটকে পুঁজি করে কেউ যেন চালবাজি করতে না পারে সেজন্য এরকম উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কোনোভাবেই চাল নিয়ে অসাধুচক্র যেন সিন্ডিকেট করতে না পারে সে জন্য বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ অভ্যন্তরীণ সংকট বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় মিয়ানমার থেকে দুই লাখ, ভিয়েতনাম থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার, থাইল্যান্ড থেকে দুই লাখ ও কম্বোডিয়া থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যার মোট পরিমাণ নয় লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ৪৬৩ গ্রাম চাল প্রয়োজন। সে হিসেবে দেশের ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জনের জন্য বছরে ৯৮ লাখ ২৬ হাজার ১১২ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন। প্রতিদিন প্রয়োজন ২৬ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন চাল। এই তথ্য অনুযায়ী অনেক চাল ঘাটতি থাকার কথা। এই ঘাটতি পূরণের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা চাল আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেসরকারি আমদানিকারকরা অতীতে নানা অজুহাতে চাল কম আমদানি করেছে। সেসব বিবেচনায় নিলে অনুমান করা যায়, এবারও তারা চালাকি করতে পারে। ফাঁদ পেতে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ যাদের স্বভাব, তাদের ওপর মানুষ ভরসা রাখবে কী করে? অতীতের মতো এবারও তারা কারসাজি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বেসরকারি আমদানিকারকদের কেউ কেউ ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে গা বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারে। এ ধরনের অপচেষ্টার কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে। জানা যায়, খাদ্য সংকটের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকার পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত করতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা নানা সময়ে প্রত্যক্ষ করেছি, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেও চালের দাম বাড়ে। অতএব, যে কোনো মূল্যে সিন্ডিকেটের তৎপরতা রোধ করতে হবে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে চাল আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে।