গত পর্যটন মৌসুমে পর্যটক গমণে সরকারের সীমাবদ্ধতার কারণে আর্থিকভাবে এক দুর্ভোগ পরিস্থিতির মুখে পড়ে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। সেই থেকে পর্যটন পেশার উপর নির্ভর এই দ্বীপের মানুষ ভালো নেই। এর মধ্যে বর্ষা নামলে দুর্ভোগের ষোলআনা যেন পূর্ণ হয়েছে তাদের! বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে গত পাঁচদিন ধরে দ্বীপে খাদ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে খাদ্য সংকটে ভুগছে বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈরি আবহাওয়া সৃষ্টির পর থেকে মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এই দ্বীপের মানুষ। সাগর উত্তাল থাকায় গত অর্ধমাসের বেশি সময় ধরে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে একমাত্র নৌ–যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে খাদ্যপণ্য সরবরাহ না হওয়ায় চরম খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা।
এক সপ্তাহের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজারের টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌ–রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বীপবাসী পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, লঘুচাপ ও নিন্মচাপের প্রভাবে টানা ছয়দিন ধরে চলমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে মাছ ধরার ট্রলারগুলোও মাছ ধরতে পারছে না। ফলে একদিকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, অন্যদিকে বন্ধ রয়েছে জেলে পেশায় জড়িত বাসিন্দাদের মাছধরা। সব মিলে দ্বীপে এখন হাহাকার চলছে।
টেকনাফ–সেন্টমার্টিন রুটের সার্ভিস বোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রশিদ আহমদ জানান, দুর্ঘটনার আশঙ্কায় গত পাঁচদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে মালামাল আনা–নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বীপবাসী কর্মহীন ও খাদ্য সংকটে দুর্বিষহ সময় পার করছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের অধিকাংশ দীর্ঘদিন নানাভাবে পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। এই মৌসুমের উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলে পুরো বছর। কিন্তু গত পর্যটন মৌসুমে সরকার পর্যটক গমণ সীমিত করায় আর্থিক সংকটে পড়েছে বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা। এর সাথে বর্তমান বৈরি মৌসুমে খাদ্য সরবাহ অনিয়মিত রয়েছে। এতে একদিকে টাকার সংকট অন্যদিকে সরবরাহ কম হওয়ায় বেড়েছে খাদ্যপণের দাম।’ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের পর নিন্মচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবারের প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে সেন্টমার্টিনের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত বসতবাড়ির বাসিন্দারা করতে পারছেন না রান্না–বান্না। মাথা গোজার ঠাঁই নেই তাদের। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ। এতে কোনো খাদ্যপণ্য আসেনি দ্বীপে। এতে বাজারে কাঁচাপণ্যসহ নিত্য কোনো পণ্যে স্বাভাবিক সরবরাহ নেই। বাজারে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বীপবাসীর দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে বার বার জানানো হচ্ছে। তিনি আশ্বাস দিচ্ছেন, পরিস্থিতি এক স্বাভাবিক হলেই ব্যবস্থা নেবেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে আগে থেকেই সেন্টমার্টিনে আড়াই হাজার মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। বৈরিতা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় তাতেও খাদ্য সংকট উত্তরণ হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নৌযান চালু হবে। এরপর সাথে আরো প্রয়োজনী সরকারি সহায়তাও পাঠানো হবে।’