খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে

| রবিবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘পভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ ২০২২’ এর ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২ শতাংশে জেলা ও উপজেলার হিসাবের ভিত্তিতে (জাতীয় হিসাব)। তবে গ্রামে দারিদ্র্য কমেছে। হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভেতে গ্রামে দারিদ্র্য ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পভার্টি ম্যাপে কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এদিকে শহর এলাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগে শহরে দারিদ্র্য ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ম্যাপ প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বিশ্বব্যাংক এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)

পভার্টি ম্যাপে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে দারিদ্র্য ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। রংপুরে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ। রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ, সিলেটে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ, খুলনায় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ আর ঢাকা বিভাগে দারিদ্র্যের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দারিদ্র্য বেড়েছে সিলেট, রংপুর, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে। বরিশালে দারিদ্র্যের হার বেশি হলেও তা আগের ২৬ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে এখন হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভেতে ঢাকার দারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ যা পভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ ২০২২ সার্ভেতে বেড়ে হয়েছে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।

দারিদ্র্য ম্যাপে আরও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা মাদারীপুরের দাসার উপজেলা ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১০ সালের সার্ভেতে এ উপজেলার দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ঢাকার পল্টনে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম ১ শতাংশ। এছাড়া নোয়াখালীতে সবচেয়ে গরিব কম বসবাস করে। এ জেলায় দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ অর্থায়নকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্য বিমোচনের অনেক উপাদানের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ অর্থায়নের প্রভাব শুধু তখনই অনুভূত হয় যখন সহায়ক নীতিগুলো কার্যকর হয়, বাজারগুলো কাজ করে এবং অনানুষ্ঠানিক পরিষেবাগুলো উপলব্ধ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ অর্থায়ন অপরিহার্য। গ্রামীণ জনগণকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনতে এবং দেশে টেকসই উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে গ্রামীণ অঞ্চলে অর্থের ব্যবহার অধিক হারে বাড়াতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র নারী, পুরুষ, কৃষক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের আয়ুউৎপাদনমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গ্রামীণ অর্থায়ন অপরিহার্য।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬১টি উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বের করে আনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুকআজম বীর প্রতীক কিছুদিন আগে বলেছেন, ৬১টি উপজেলায় ৫০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমরা দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষদের বের করে আনতে খাদ্য ও জীবিকা সহায়তা প্রদানের একটি কর্মসূচি নিচ্ছি। মন্ত্রণালয় দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসাবে বিবেচনা করে তৃণমূলে দারিদ্র্য হ্রাসকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবার খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১০০০ টাকা এবং জীবিকা সহায়তা হিসেবে ২০০০ টাকা পাবে। তিনি বলেন, ৬১টি উপজেলা যেখানে ৫০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেখানে পাইলট ভিত্তিতে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। ৬১টি উপজেলার মধ্যে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ২৪টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় ১৪টি, ঢাকা বিভাগের অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার ১০টি উপজেলা, খুলনা বিভাগে পাঁচটি উপজেলা, ময়মনসিংহ বিভাগে সাতটি এবং বরিশাল বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে। এছাড়া আরো ১৪টি উপজেলায় ৪৭ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রাথমিকভাবে এসব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়। ১৪টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রামে চারটি, রাজশাহীতে দুটি, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশালে একটি করে উপজেলা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে উঠেছে। এর ফলে হঠাৎ কোন বিপদ এলে সেটা মোকাবিলা করার মতো অবস্থা তাদের নেই। অনেক পরিবার, দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে উঠে এলেও তাদের টিকে থাকার সামর্থ্য নেই। তাদের অর্থ সঞ্চয় করা বা পুঁজি জমানোর সক্ষমতা নেই। ধাক্কা সামলানোর মতো কোন সম্পদ তাদের নেই। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অপুষ্টির হার থেকে বিপুলসংখ্যক জনগণকে রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে