খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় মনোযোগ বাড়াতে হবে

| মঙ্গলবার , ১১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

নানা কারণে আমাদের দেশের কিশোরকিশোরীরা অপুষ্টিতে ভুগছে। ১০ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বয়সকে বয়ঃসন্ধিকাল ধরা হয়। এ সময় ছেলেমেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি ঘটার পাশাপাশি মানসিক বিকাশ ঘটে। এ সময় সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তারা যুক্ত হয়। পরিবারের সদস্যদের চেয়ে বাইরের মানুষের সঙ্গে, বিশেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করে থাকে কিশোরকিশোরীরা।

পুষ্টিবিদদের মতে, বয়ঃসন্ধিকালে সুষম খাবার খাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার তালিকায় ভিটামিন, শর্করা, আমিষ, চর্বি, লবণ ও পানি এই ছয়টি উপাদান থাকতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যরোর (বিবিএস) সামপ্রতিক ‘ফুড সিকিউরিটি সিচুয়েশন অ্যান্ড কোপিং মেকানিজম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৮৫ শতাংশ পরিবারই নিয়মিত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারছে না। গড়ে গ্রামের ১৩ শতাংশ পরিবার নিয়মিত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করছে। শহরের ১৬ শতাংশ পরিবার আর সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৪ শতাংশ পরিবার আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার কম হওয়ার ফলে নারী ও শিশুদের মধ্যে রক্তশূন্যতা বাড়ছে। নারী ও শিশুদের সুষম খাদ্যাভ্যাস গ্রহণে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নীতিগত পদক্ষেপ দরকার।

নারীদের শরীরে আয়রনের ঘাটতির অন্যতম কারণ হলো শারীরিক বৈশিষ্ট্য। প্রতি মাসে নারীর ঋতুগ্রাবের ফলে ৩০৮০ মিলিলিটার রক্ত বেরিয়ে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে এর মাত্রা অনেক বেশি হয়। রক্তক্ষরণের কারণে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। গর্ভবতী নারীরা এক্ষেত্রে আরো বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বাড়তি চাহিদা পূরণ না হলে নারী ও শিশু দুজনই রক্তশূন্যতার ঝুঁকিতে পড়েন। এছাড়া ল্যাকটেশন বা মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ও আয়রন ক্ষয় হয়। ফলে প্রসূতি নারীদের মধ্যে রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, খাদ্যাভ্যাসে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতার পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও সচেতনতার ঘাটতি রক্তশূন্যতাকে আরো প্রকট করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রক্তশূন্যতা থেকে সুরক্ষায় বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। খাবারে যেন আয়রনের পরিমাণ কাঙ্‌ক্িষত মাত্রায় থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কচু ও কচুশাক, পালংশাক, কলিজা, কাঁচকলা ও খেজুরে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। তবে অনেক সময় খাবারের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ না হলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি এড়াতে সুষম খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব নারীদের রক্তশূন্যতার সঙ্গে খাবারে অরুচি, ক্রমে ওজন কমে যেতে থাকলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং দ্রুত পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক জনসংখ্যার এ দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা। কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য এ সমস্যা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে, সন্দেহ নেই। এর কৃতিত্ব মূলত কৃষকদের। তারা যাতে এক্ষেত্রে আরও সাফল্য অর্জন করতে পারেন, সেজন্য সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে এ সহায়তা আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য কৃষিজাত খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং বেসরকারি প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। ক্ষুধা সমস্যা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সামপ্রতিক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি অংশের বসবাস এশিয়াুপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মারাত্মক অপুষ্টি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা পর্যন্ত বিস্তৃত পরিসরে এবং প্রায় সব বয়সী মানুষের ওপরেই অপুষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তবে বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ে এবং তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অঞ্চলে ৭ কোটি ৯০ লাখ শিশু বা পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি চার শিশুর একজন খর্বাকৃতির সমস্যায় ভুগছে এবং ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুর জীবন অকেজো হয়ে যাচ্ছে, যাদের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ভয়াবহভাবে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও গত দশকে শিশুর খর্বাকৃতির সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে শিশুর জীবন অকেজো হয়ে পড়া ঠেকাতে খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে।

অপুষ্টি নিরসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও এটি সারা বিশ্বেই একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতিটি রাষ্ট্রকেই এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি যেন ঝুঁকির মধ্যে না থাকে, তার জন্য মনোযোগ বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে