খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী ব্যক্তির শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

| শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য। এ বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। যদিও আমাদের দেশে বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়েছে। জানা যায়, আমাদের শরীরে ৩৩ শতাংশ রোগ হওয়ার পেছনে রয়েছে ভেজাল খাদ্য। পাঁচ বছরের নিচে শিশুর ৪০ ভাগ রোগ হয় দূষিত খাদ্য থেকে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত নানা পর্যায়ে দূষিত হয়। এর মূল কারণ অসচেতনতা। অতি মুনাফাখোর কিছু ব্যবসায়ী এর জন্য দায়ী। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ ভেজাল আতঙ্কে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকা আমাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একথা ভুললে হবে না যে, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে একটি টোল ফ্রি হটলাইন চালু করেছে। এই টোল ফ্রি নম্বরে কেউ অভিযোগ করলে অভিযোগসমূহের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ২৫ লাখ ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ী ও ১৮টি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া দেশে প্রায় ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন প্রায় ১২০টি আইন ও নীতিমালা রয়েছে।

দেশে ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাদ্য ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগের পেশাগত জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ নেই। সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য একটি জাতীয় প্রত্যাশা। দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে যেন সবাই সহজে ও সুলভ মূল্যে খাদ্য পেতে পারে, সে জন্য সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইনের বাস্তবায়নের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। সর্বস্তরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত আইন রয়েছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সেগুলো কার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ৬৪টি জেলায় ও আটটি বিভাগীয় শহরে ৭৪টি নিরাপদ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইন মেনে চলার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী নানা সংগঠনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিধিমালাগুলো প্রণয়নের কাজ অব্যাহত রেখেছে।

নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আবশ্যক। আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষাবাদের জন্য কৃষককে আগ্রহী করতে হবে। এ ছাড়া এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ও সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে কাজের গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবু বলা যায়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কোনো সহজ কাজ নয়। সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে ভোক্তাদের সচেতন করা। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ভোক্তারা পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন হলে ভালো পণ্যটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন। অন্যদিকে গুণগত পণ্যের যথার্থ মূল্য পেলে কৃষকও উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী ব্যক্তির যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি একজন অপরাধ করে বেঁচে যায়, তাহলে অন্যজন এই অপরাধ করার সাহস পায়। দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার জন্য খাবার সংরক্ষণ করা বা নিরাপদে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করতে পারলে বিশুদ্ধ খাবার দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দূষিত খাবারের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে শিশুর স্বাস্থ্য।

নিরাপদ খাবারের ক্ষেত্রে নিরাপদ পানিও অতি জরুরি। বেশির ভাগ সময় খাওয়ার পানি অস্বাস্থ্যকর বা অনিরাপদ। অনিরাপদ পানি পানের ফলে নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যা স্বাস্থ্য খাতে খরচের হার বৃদ্ধি করছে।

মোট কথা, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধআবদুস সাত্তার চৌধুরী : পুঁথিবিশারদ ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক