শত বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু গোটা বিশ্বকে পর্যদুস্ত করে ফেলেছিল। তখন স্বাস্থ্য বা চিকিৎসাবিজ্ঞান এতটা এগোয়নি। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ওই ভাইরাস। তারপর মাঝে আরও নানা রোগ–শোক এসেছে। এর মধ্যে আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস, মধ্যপ্রাচ্যে সার্স ভাইরাস এবং ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের মতো রোগের কথা উল্লেখ করা যায়।
তবে সেই স্প্যানিশ ফ্লুর মতো মহাবিপর্যয় নিয়ে ২০২০ সালে বিশ্বে নেমে আসে করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) অতিমারির প্রকোপ। প্রায় ৭০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়েছে এই ভাইরাস। সংক্রমিত করেছে ৭৭ কোটির বেশি মানুষকে। এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। দেশে দেশে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে খাদ্যপণ্য আমদানি–রপ্তানি সীমিত হয়ে পড়ে। যার জের এখনও টানতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। খবর বাংলানিউজের।
করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করে আপাতত এই রোগের লাগাম টেনে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এখানেই কি শেষ? মানুষের এই সাধারণ প্রশ্ন আছে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদেরও মাথায়। তারাও ভাবছেন, ভবিষ্যতে যদি এমন অন্য কোনো নতুন ভাইরাস বা অসুস্থতা মানবজাতিকে চেপে ধরে, তবে নিস্তার মিলবে কিসে? এজন্য তারা আরও অগ্রবর্তী চিকিৎসা বা টিকার সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে আরও এক কদম এগিয়ে ভাবছেন ভারতের বহুমাত্রিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গবেষণার পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের বিষয়টিও মাথায় রেখে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। উৎপাদিত কোনো খাদ্যের মাধ্যমে ভাইরাস বা ছোঁয়াচে রোগ ছড়ালে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে বা সেই পরিস্থিতি আগেই কীভাবে ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন তারা।
হায়দরাবাদ সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মতবিনিময় করেন ভারত বায়োটেকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। হায়দরাবাদ মূল শহর থেকে সবুজ চাদরে ঢাকা জেনোম ভ্যালিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে ভারত বায়োটেকের কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন তারা। তারা জানান, মানুষ, পশু ও গাছপালার স্বাস্থ্য রক্ষায় নীরবে কাজ করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান।
বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র জানান, চিকুনগুনিয়া নামে মশাবাহিত যে রোগ বাংলাদেশ–ভারতসহ বিভিন্ন দেশকে ভোগাচ্ছে, তার টিকা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে ভারত বায়োটেক। একইসঙ্গে গরুর লাম্ফি স্কিন ডিজিসের টিকার তৃতীয় ট্রায়াল শেষে অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড–১৯ মহামারি অনেক কিছু ভাবতে বাধ্য করেছে বিজ্ঞানীদের। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাস প্রতিরোধে যেমন ভারত বায়োটেক গবেষণা করছে। তেমনি আলু বা যে কোনো খাদ্যপণ্যে যদি কোনো ভাইরাস বা রোগ বিপর্যয় নিয়ে আসে তাহলে সেটা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেটার প্রস্তুতি নিয়েও কাজ করছেন ভারত বায়োটেকের গবেষকরা। করোনা মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মনোযোগী হয়েছেন, যেন খাদ্যপণ্যের কোনো রোগ সামলাতে কষ্ট কম হয়।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপের প্রসঙ্গ টেনে জানতে চাওয়া হয়, এই জ্বরের কোনো ভ্যাকসিন আসবে কিনা। জবাবে ভারত বায়োটেকের মুখপাত্র বলেন, ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। তবে এটি বেশ কঠিন কাজ। কারণ ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তন হয়। এরপরও আশা করা যায়, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। তবে এখন যে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, তা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগ ক্যানসার এবং ডায়াবেটিসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও গবেষণা চলছে। হয়তো শিগগির মানবজাতি এই দুই রোগের চিকিৎসায় কোনো সুখবর পাবে।
মুখপাত্র জানান, শুধু মানুষের স্বাস্থ্য–চিকিৎসা নয়, ভারত বায়োটেক কাজ করছে গবাদি পশু–পাখি ও গাছ–গাছালির বিভিন্ন রোগের বিষয়েও। এছাড়া তারা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে তুলনামূলক কম মূল্যে টিকা দিচ্ছে।