খাদ্যকে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে

| রবিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন। সারা বিশ্বের প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়তে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন তিনি। দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশ যাতে কখনোই দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যের অপ্রতুলতার মতো কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয় সেজন্য তিনি দেশবাসীকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাটি ও মানুষ আছে। তাই এখন থেকেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, বাংলাদেশ যাতে কখনো দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকটে না পড়ে। আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াব।
গত বুধবার ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনের প্রসঙ্গ টেনে দেশে প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় এনে উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালে বিশ্বে এবং বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও একইরকম শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এ ধরনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে পূর্ব প্রস্ততির আহ্বান জানিয়ে ভালো কাজ করেছেন। পাশাপাশি জনগণও তাঁর বক্তব্য শুনে যতটা প্রস্ততি নেওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি শঙ্কিত হয়ে উঠছেন। প্রধানমন্ত্রী যদিও আশা প্রকাশ করেছেন, আমাদের দেশে খাদ্য সংকট হবে না। তবু আগাম বিপদসংকেত পূর্বপ্রস্তুতির জন্য সহায়ক মনে করে তিনি তাঁর এ বক্তব্য উপস্থাপান করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যনিরাপত্তা হলো খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অর্থাৎ কারো হাতে টাকা থাকলে সে খুব সহজে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের মজুত ও তার সহজলভ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তাই হলো খাদ্য নিরাপত্তা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এই খাদ্যনিরাপত্তা ইতিমধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দুটি বড় জোগানদাতা। ইউক্রেনকে বলা হয় ইউরোপের রুটির ঝুড়ি। গম উৎপাদনে ইউক্রেন বিশ্বের পঞ্চম। বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা গমের ৩০ শতাংশই জোগান দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়া। এছাড়াও সানফ্লাওয়ার অয়েল, ভুট্টা, বার্লি প্রভৃতি খাদ্যশস্য বিশ্ববাজারে বড় আকারে সরবরাহ করে এই দুটি দেশ। এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক গরিব ও উন্নয়নশীল দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের এসব খাদ্যশস্যের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বর্তমান যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে এই দুটি দেশের খাদ্যশস্য রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন বন্দর দখল এবং কৃষ্ণসাগরে পাল্টাপাল্টি অবরোধের কারণে খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বিশ্ববাজারে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। হুমকিতে পড়েছে বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তা।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্যকে সব জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের পুষ্টিমান নিশ্চিতে পুষ্টিকর খাবার তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।
দেশীয় বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে সরকার। এজন্য চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানি সহজ করতে সমপ্রতি শুল্কহার ব্যাপক কমানো হয়েছে। এসব উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো আমদানি করে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো যাতে ভোক্তা সাশ্রয়ী দামে চাল কিনে খেতে পারে। এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা দরে চাল বিতরণের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা-ডব্লিউএফপি বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এতবড় খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হয়নি বিশ্ব। সামনে খারাপ সময় অপেক্ষা করছে বলেও সতর্ক করছে সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি আরো প্রকট হলে আমদানি-নির্ভর দেশগুলো বেকায়দায় পড়বে। এমতাবস্থায়, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করারটা অতি জরুরি। বিশ্ববাসীর খাদ্যচাহিদা পূরণে বিশ্ব নেতাদের উচিত যুদ্ধ বন্ধসহ খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব খাদ্য দিবস