ছেলেবেলায় রাক্ষসের গল্প পড়তে এতো ভালো লাগতো যে নাওয়া-খাওয়া ভুলে যেতাম। রাক্ষসরা খুব খায়। মহাভারতের বক রাক্ষস নাকি প্রতিদিন একটা মানুষ খেতো। আমরা কেও রাক্ষস দেখিনি। কিন্তু কেও বেশী খেলে তাকে রাক্ষসের সাথে তুলনা করি। শেরে বাংলা ফজলুল হক মৃত্যুর কিছুদিন আগেও ৬০টি ফজলি আম খেয়েছিলেন। নাভি উল্টিয়ে খেতে পারতেন বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। খাওয়াতে পিছিয়ে ছিলেন না মওলানা ভাষানীও। ঠাকুর পরিবারের প্রায় সবাই পেটপুরে মিষ্টি খেতেন। সেকালের জামাইরা খুব খেতে পারতো। শাশুড়ি জামাইয়ের পাতে একটা বড় রুই মাছের মাথা দিতেন। জামাই সেটা পরম তৃপ্তির সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতো। একালের জামাইরা বেশীর ভাগই হলো পেট রোগী। এরা খাওয়ার আগে ও পরে ট্যাবলেট খায়। আমি বেশী খেতাম বলে মা আমাকে বলতেন, তুই আগের জন্মে রাক্ষস ছিলি। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীদেরও বেশী খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। বোয়াল মাছ যা সামনে পায় তাই গিলে খায়। এ মাছটি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যেও আবার বোয়াল মাছ চরিত্রের মানুষ রয়েছে। এরা একেবারে রাঘব বোয়াল। এদের বংশ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যতিক্রমীভাবে খায় গরু। দু’বেলার খাবার একবেলা খেয়ে নেয়। বিকাল হতে রাত পর্যন্ত শুধু জাবর কাটে। মাঝে মাঝে আমারও গরুর মতো খেতে ইচ্ছা করে। মনের সুখে তখন জাবর কাটতে পারতাম। আমরা যে ছেলেবেলার স্মৃতি রোমন্থন করি সেটাও আসলে জাবর কাটা। করোনা কালে আমি এখন শুধু স্মৃতির জাবর কাটছি। মনে পড়ছে আমাদের পন্ডিত স্যারের কথা। তিনি সব সময় আত্মাকে আত্মা বলে উচ্চারণ করতেন। আমি কখনো আত্মা বলতে পারতাম না। এ জন্য তিনি আমাকে কান মলা দিতেন। এটা এখন মধুর স্মৃতি হয়ে রয়েছে। চাকরি জীবনে আমি বহুকাল কঙবাজার কাটিয়েছি। সে সময় প্রতিদিন বিকালে সাগর পারে হাওয়া খেতে যেতাম। আমার বসে থাকবার একটা নির্দিষ্ট স্থান ছিলো। অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমি বসে থাকবার পর পরই একটা কুকুর রোজ এসে আমার পাশে বসে ঠিক আমার মতো করে সূর্যাস্ত দেখতো। একবার এক বিদেশিনী এ দৃশ্য দেখে আমাদের ছবি তুলেছিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি হেসে বলেছিলেন, এটা আমার একটা দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ। হাতি যখন কোনো কলা বাগানে ঢুকে তখন সে এ কলা বাগান খেয়ে সাবাড় করে দেয়। হাতি যেমন বেশী খায় তেমনি মলত্যাগও করে। এ মলকে বলা হয় লাদা। খাওয়ার বাছ-বিচার নাই ছাগলের। এ জন্যই আমরা বলি, ছাগলে কিনা খায় পাগলে কিনা বলে। ছাগল বারবার খায়, কিন্তু বেশী খায়না। তাই তার মলটা হয়ে গেছে লাদি। মানুষের মলের প্যাটার্নও আবার মাঝে মাঝে হয়ে যায় লাদা আর লাদির মতো। ব্যাঙ একবারে বেশী করে খেয়ে পুরা শীতকালটা ঘুমিয়ে কাটায়। ইচ্ছা করলে আমরাও এ অভ্যাস গড়ে তুলতি পারি। অবাক হই যখন দেখি কোনো ‘চীনা ম্যান’কে দুটো ছোট্ট কাঠি দিয়ে খাবার খেতে। আমরা পাঁচ আঙ্গুলে গ্রাস তুলে খাওয়ার পরও এদিক সেদিক ভাত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। চীনাদের তা হয় না। অজগর সাপ গিলে খায়। কোনো কোনো সময় আস্ত হরিণ গিলে এমন অবস্থা হয় যে আর নাড়া চাড়া করতে পারেনা। রাখালরা তখন অজগর সাপ ধরে ফেলে। একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে, ‘ঊনা ভাতে দুনা বল’। মানুষের যখন বয়স বাড়ে তখন এমনিতেই ঊনা ভাত খায়। আমিও খাচ্ছি। কিন্তু দুনা বল হবে কী?