রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রমজানের বাজার ধরার জন্য ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি ও গুদামজাতকরণে শুরু করছেন। সাধারণত রমজান শুরুর দুই তিন মাস আগে থেকে পণ্য আমদানির সব ধরণের প্রস্তুতি সেরে রাখেন। পরবর্তীতে পণ্য আসার পর ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। চলতি বছর রমজান শুরু হচ্ছে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। সেই হিসেবে রমজানে পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে সময় আছে তিন মাস। খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা বলছেন, পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুমাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। রমজানের বাকি আছে আর তিন মাস। এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে মার্কেট ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও দেশের অভ্যন্তরে ডলারের উচ্চমূল্যের কারণেও আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বাজার নিম্নমুখী। তাই রমজান আসার আগে কমতে পারে দাম।
এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। যা কেজি হিসেবে দাম পড়ছে ১১৫ টাকা। যা গত বছর বিক্রি হযেছে ৮৪ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা এবং চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৩ টাকায়। গত বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৯০ ও ১১০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। মটর ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা, সাদা মটর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে মুগ ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। গত বছর বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। অন্যদিকে বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫৫০ টাকা। যা গত বছর বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। বর্তমানে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৩০ টাকা। কেজি হিসেবে দাম পড়ছে ১১৬ টাকা। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। বর্তমানে চিড়া (২৫ কেজি বস্তা) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর সাধারণ মানের খেজুর (১০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে পচুর পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। তবে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে খেজুরের শুল্ককর কমানোর হয়েছে। তাই এবার দাম সহনশীল থাকবে বলে আশা করা যায়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছেন। ছোলার আন্তর্জাতিক বাজার কমছে। বাজারে ছোলার ঘাটতিও নেই। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে বাজার কমবে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা গত তিন চার মাস আগে পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলেন। ইতোমধ্যে পণ্যের চালান গুদামে এসে পৌঁছেছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আবার তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। বাজারে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে ছোলা, মটর ডাল, মশুর ডাল, খেসারি ডাল এবং চিনির কোনো ঘাটতি নেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর দোকান গুদামে পর্যাপ্ত পণ্য আছে। গত বছরের অবিক্রিত পণ্য রয়েছে। এছাড়া অনেকে পণ্য আমদানি করছেন। রমজানে পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।