খাতুনগঞ্জের পাইকারীতে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেল এবং সয়াবিন তেলের দাম প্রতি মণে বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের বুকিং দর বেড়েই চলেছে। এর প্রভাবে পাইকারীতে দাম চড়া। তবে ভোক্তারা বলছেন, গত আগস্টে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। অথচ সেই দামে তেল বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। তাই সরকারকে নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করতে হবে।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ টাকায়। সেই তেল মণে ১০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। এছাড়া বর্তমানে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ আগে এই তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার এখনো গুটিকয়েক শিল্প গ্রুপের কাছে জিম্মি। তারা ইচ্ছে মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার যদি ভোজ্যতেলের আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়, তবে আমদানি বাড়বে। আমদানি বাড়লে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আমির হোসেন নামের একজন ভোক্তা জানান, ব্যবসায়ীদের মর্জিতে চলে আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার। তাই বুকিং দর বৃদ্ধির নাম করে বিভিন্ন সময় দাম বাড়িয়ে থাকে। কিন্তু যখন বুকিং দর কমে, তখন ওনারা দাম কমান না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে জরিমানাও করেন। সবচেয়ে বড় সমস্যার বিষয় হচ্ছে– খাতুনগঞ্জের ডিও প্রথা নামে এক ধরণের অবৈধ পণ্য বেচাকেনা চলে। যাতে একজন ক্রেতা শুধু একটি কাগজ কেনেন। যেখানে কেবল পণ্যের নাম ও দাম লেখা থাকে। এতেও বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।