খাতুনগঞ্জে ‘ডিও স্লিপ’ কেনাবেচার দৌরাত্ম্য থামাবে কে?

ডিও স্লিপের একাধিক হাতবদলে বাড়ে পণ্যের দাম

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে প্রশাসনের অভিযানেও থামছে না ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ কেনাবেচার দৌরাত্ম্য। খাতুনগঞ্জে বিশেষ করে ভোজ্যতেল ও চিনি বাজারে আসার আগেই নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে অগ্রিম ডিও কিনে নেন আমদানিকারকরা। অভিযোগ রয়েছে, খাতুনগঞ্জের বাজারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ভিত্তিক তিনটি শিল্পগ্রুপ সবচেয়ে বেশি ডিও স্লিপ বিক্রি করে। বাজারে পণ্য আসুক বা না আসুক এসব স্লিপ বিভিন্ন জনের হাত বদল হয়ে পণ্যের দাম উঠানামা করে। অপরদিকে স্লিপ বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেন। তারা বলছেন, খাতুনগঞ্জে ডিও স্লিপ নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড লেবেলে একটা বাণিজ্য হচ্ছেএমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গেলে কেউ নির্দিষ্ট করে আমাদেরকে প্রমাণ দেখাতে পারে না। ডিও স্লিপে পণ্যের নাম ও দাম ছাড়া আর কিছুই লিখা থাকে না। আমরা যখন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে যাই, তখন সেই প্রতিষ্ঠান স্লিপ তাদের নয় বলে জানায়। কারণ কাগজে প্রতিষ্ঠানের নাম, সিল ও স্বাক্ষর কিছুই থাকে না।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, তেল, চিনি ও গমের আমদানিকারকরা বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজারদর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি, কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এ সব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০ টাকা, পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬২০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের একজন আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি শিল্পগ্রুপ প্রচুর পরিমাণ তেল ও চিনির অগ্রিম ডিও বিক্রি করে। যখন ডিও বিক্রি করে তখন দাম কম ছিল। কিন্তু যেইমাত্র বাজারে দাম বেড়ে যায় তখন ওই প্রতিষ্ঠান আগের দামে পণ্য ডেলিভারি দিতে গড়িমসি করে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডিও স্লিপের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময় খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছি। ডিও স্লিপ যেখান থেকে ইস্যু হয়, সেখানে গেলে ওই প্রতিষ্ঠান বলে আমরা এ সব পণ্যের ব্যবসা করি না। সম্প্রতি পণ্য বিক্রিতে ক্রেতাকে রশিদ সরবরাহ না করায় আরএম ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। আসলে সরকার ধীরে ধীরে তেল চিনির সম্পূর্ণ প্যাকেটজাত করে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। সব কিছু প্যাকেটজাত হয়ে গেলে তখন আর ডিও স্লিপ বাণিজ্য কেউ করতে পারবে না। তখন পণ্যের গায়ের দামেই বিক্রি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইফতারের পর মার্কেটে বাড়ছে ক্রেতার আনাগোনা
পরবর্তী নিবন্ধএক-এগারোর কুশীলবরা ও বিএনপি একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র করছে : তথ্যমন্ত্রী