খাতুনগঞ্জে চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা!

তিন দিনেই প্রতি মণে দাম বেড়েছে ১৯০ টাকা শুল্ক কমানোর পরও কেন এই অবস্থা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

আমদানি শুল্ক কমানোর পরও বেড়ে চলেছে চিনির দাম। চিনির সরবরাহ সংকটের অজুহাতে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গত তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ চিনির দাম বেড়েছে ১৯০ টাকা। শুধু তাই নয়, গতকাল খাতুনগঞ্জের বেশিরভাগ দোকানে চিনি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা অভিযোগ করেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, শুল্ক কমানোর পরও কেন দাম বাড়ছে?

খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে বাজারে চিনির সরবরাহ কমে গেছে। অথচ এই সময়ে চিনির ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১২০ টাকায়। তিন দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন চিনির আড়তদার জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার জন্য অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয় তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি, কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

কাজির দেউড়ি এলাকার হক ভান্ডার স্টোরের বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে এখন এক কেজি চিনিও নেই। সরকার ৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর পর দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে। দাম কমবে এই চিন্তা থেকে আমরা চিনি কিনিনি। আজকে (গতকাল) শুনেছি ব্যবসায়ীদের কাছে পর্যাপ্ত চিনি থাকার পরেও তা বিক্রি করছে না। এতদিন আমরা খুচরা পর্যায়ে ১১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এখন পাইকারিতে নিতে হবে ১১২ টাকায়। এছাড়া চিনি বিক্রির কোনো রশিদ দেবে না। টাকা পরিশোধ করে নিয়ে যেতে হবে।

আমির হোসেন নামে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন দোকান থেকে হঠাৎ করে চিনি উধাও হয়ে গেছে। বেশিরভাগ দোকানে চিনি পাওয়া যায়নি। রমজানের আগে এটি অশনি সংকেত বলা যায়।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, চিনির সরবরাহ কমার কারণে দাম বাড়ছে। রমজান উপলক্ষে এখন চিনির চাহিদা বেড়েছে। সে তুলনায় সরবরাহ নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে যাবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজি নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশাসনকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই মাঠে নামা উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরকারি চিনিকলগুলোর বিপণন অব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি চিনির আমদানিকারকরা কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে উল্লেখ করা হয়, এই সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়া প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিপিবি : অন্তহীন অভিযাত্রার ৭৫ বছর
পরবর্তী নিবন্ধবুড়ো হয়ে যাচ্ছে ধান