খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি ৭ বছরেও

শয্যা সংকটে বারান্দায় চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

দরপত্র দেওয়ার ৭ বছর পরও শেষ হয়নি খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। ভবনের কাজ শেষ করতে না পারায় বন্ধ রয়েছে আইসিউ, কিডনি ডায়ালাইসিসের মত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা। শয্যা সংকটে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে বারান্দার ফ্লোরে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি তাদের। খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলার পাশাপাশি রাঙামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দারা চিকিৎসা সেবার জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন হাসপাতালে প্রায় ৬ শতাধিক রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে নির্মাণ শুরুর ৭ বছর পরও শেষ হয়নি ভবনের নির্মাণ কাজ। ভবন সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। শয্যা সংকটে রোগীরা সেবা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও ফ্লোরে।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির ডলুব্রিজ এলাকার বাসিন্দা রতন মিয়া বলেন, আমি হাসপাতালের বারান্দায় আছি প্রায় তিন মাস। ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো জায়গা নেই। এখন তো শীতকাল, ঠাণ্ডায় কষ্ট পাচ্ছি। হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমরা সুচিকিৎসা পেতাম।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার ভুয়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা বাবাকে নিয়ে এসেছি। উনার বয়স হয়েছে। ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা নেই, বাধ্য হয়ে তাই বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আমাদের মতো অনেক রোগী রয়েছে যারা বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে।

ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন ও ফরিদ মিঞা বলেন, ৭ বছর ধরে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলে। কখনো কাজ চলে, কখনো বন্ধ থাকে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় স্থানীয় মের্সাস সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন নির্মাণ কাজ শেষ করা যাচ্ছে নাএ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি ঠিকাদার মোহাম্মাদ সেলিম।

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ২০২৪ সালে কাজটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যে আরো দুইটি প্রকল্পের দরপত্র দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।

খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পী বলেন, নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভবন সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা, ডায়াগনস্টিকসহ অন্যান্য সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমরা সেই অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দিতে পারতাম। সেক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে সেবা দিতে পারতাম। এখন আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে আড়াইশ শয্যার জনবলের নিয়োগ পেয়েছি। বিভিন্ন উপজেলা ও অন্য জেলা থেকেও এখানে এসে চিকিৎসা নিচ্ছে। ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় আইসিইউ ও কিডনি ডায়ালাইসিসের মত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধনিউ মার্কেট মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি