খাগড়াছড়িতে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র–জনতার ডাকে সকাল–সন্ধ্যা সড়ক অবরোধে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবরোধের কারণে গতকাল শনিবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ির সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সাথে দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড়, মহালছড়ি, গুইমারাসহ ৯ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে। অবরোধের সমর্থনে ভোরে খাগড়াছড়ির সদরস্থ চেঙ্গি স্কয়ার, জিরো মাইল, স্বনির্ভরসহ বেশ কিছু জায়গায় পিকেটিং করে গাছের গুঁড়ি ফেলে টায়ার ও গাছের গুঁড়ি পুড়িয়েছেন অবরোধকারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে তা অপসারণ করে। তবে পৌর শহরের ভেতরে হালকা যান ইজিবাইক, টেক্সি ও মোটরসাইকেল চলাচল করেছে।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কে দুপুর দেড়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়। এ সময় খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকায় অবরোধকারীদের সাথে স্থানীয় বাঙালিদের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুর ২টা থেকে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ দেন। তবে ১৪৪ ধারা জারি করার পরও দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি মহাজন পাড়া এলাকায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই কারণে গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আকতার।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, অবরোধের সময় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দুপুরের পর উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় বিশৃক্সখল পরিস্থিতি হয়। পরে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে উত্তেজিত দুই পক্ষকে আমরা সরিয়ে দিই। নতুন করে যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মো. হাসনুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মো. ছাবের বলেন, দুই পক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে মোট ২৩ জন আহত হয়। এদের মধ্যে ২১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছে। দুজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অবরোধের কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাজেকগামী পর্যটকরা। সাজেকের সাথে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন প্রায় তিন হাজার পর্যটক। যারা শুক্রবার বেড়াতে গিয়েছিলেন তারা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে ফিরতে পারেননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা দীঘিনালায় অবস্থান করছিলেন।
এদিকে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকগামী হাজারখানেক পর্যটক খাগড়াছড়িতে আটকা পড়েছেন। সাজেক যেতে না পেরে তারা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছেন। পর্যটক আশুতোষ, সাইদুল ও রাকিব বলেন, অবরোধের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখানে এসে আটকা পড়েছি। একটা পর্যটন শহরে এসে ভোগান্তিতে পড়েছি। সাজেকে যাওয়ার পর্যটকবাহী গাড়ি ছাড়ছে না। অনেকে পরিবার নিয়ে আটকা পড়েছে। শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে অনেক পর্যটককে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। ভিকটিমের পিতা অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন। পরদিন বুধবার সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ শয়ন শীল (১৯) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে দুই আসামি। তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শুক্রবার সকালে নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ করে জুম্ম ছাত্র–জনতা। সমাবেশ থেকে গতকাল সকাল–সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল।