খাগড়াছড়িতে ভবঘুরেদের জন্য মানবিক উদ্যোগ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। খাগড়াছড়িতেও সবকিছু বন্ধ। হোটেল, দোকানপাট, শপিং সেন্টার- সব জায়গায় সুনসান নীরবতা। সড়কে নেই যান চলাচল। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। তবে পাহাড়ের ফাঁকা রাস্তায় এখনো কিছু মানুষ ঘুরে বেড়ায়। ঘরহীন এসব মানুষ বলতে গেলে প্রায় অভুক্ত থাকে। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় ঠিক নেই তাদের খাওয়া-দাওয়া। যেসব মানুষ তাদের সহায়তা করতেন তারাও আজ লকডাউনে বন্দী।
এমন পরিস্থিতিতে ভবঘুরে ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবিক’ ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
খাগড়ছড়ির দীঘিনালায় প্রায় ৩০ জন মানসিক প্রতিবন্ধীর জন্য নিয়মিত আহারের ব্যবস্থা করেছেন জীবন চৌধুরী উজ্জ্বল। নিজের বাড়ির আঙিনায় প্রতিদিন ভবঘুরেদের জন্য রান্নার আয়োজন করেন তিনি। এরপর অনেকেই এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের লকডাউনেও এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
গত পাঁচ দিন ধরে ভবঘুরেদের জন্য ভাত, খিচুড়ি, ডিম ও মুরগীর মাংস রান্না করা হচ্ছে। এসব খাবার বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দীঘিনালা ইউনিট। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীঘিনালা উপজেলায় মানসিক প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরের সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। এরা উপজেলার সদর, মেরুং, বাবুছড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকে। দিনের নিদিষ্ট সময় তাদের খাবার বিতরণ করে রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা।
সরেজমিনে জীবন চৌধুরী উজ্জ্বলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাঠের চুলায় রান্না চলছে। আয়োজনে রয়েছে ভাত, ডিম ও মুরগীর মাংস। রান্নার পর খাবারগুলো প্যাকেটজাত করা হয়। এরপর ইজিবাইকে করে তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ভবঘুরেদের কাছে।
দীঘিনালা যুব প্রধান সুজল চৌধুরী ও রেড ক্রিসেন্ট কর্মী শান্ত বড়ুয়া বলেন, বলেন, দীঘিনালায় যেসব ভবঘুরে রয়েছেন, তাদের জন্য খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে আমরা তাদের খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। প্যাকেটজাত খাবারের পাশাপাশি পানির বোতলও দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
কয়েকদিন ধরে ভবঘুরে মানুষের জন্য রান্না করছেন প্রীতি চৌধুরী। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে অনেক ভবঘুরে অভুক্ত থাকেন। তাদের জন্য রান্না করতে পেরে ভালো লাগছে। অবশ্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু হলেও ধীরে ধীরে অনেক মানুষ এই মানবিক কাজে অংশ নেন। স্থানীয় শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরা, বৌদ্ধ ধর্মীয় ট্রাস্টের ট্রাস্টি রুপনা চাকমা, নমিতা সরকার নামে এক নারী একদিনের খাবারের আর্থিক খরচ দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনও এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে। জীবন চৌধুরী উজ্জ্বল বলেন, গত বছর লকডাউন শুরুর পর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভবঘুরেদের জন্য রান্না করে খাবার পাঠিয়েছি। এবার লকডাউনে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাবার বিতরণ শুরু করি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে এই মানবিক কাজের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধকৃষককে ভর্তুকিতে হারভেস্টার প্রদান