খাগড়াছড়িতে পরিবেশ আইন না মেনে দেদারছে চলছে পাহাড় কাটা। বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার ও ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য পাহাড় কাটছে একটি চক্র। পাহাড়ের মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। দিনে পাহাড় কাটা হলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। গত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। বিনা বাধায় পাহাড়খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিবেশ সুরক্ষা আইন লঙ্গন করে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় পুরো পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন নাছির প্রকাশ ইতালি নাছির নামের এক ব্যক্তি। মাটিরাঙা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মুসলিম পাড়ায় প্রায় ৫ একর আয়তনের একটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, রাতের আঁধারে চলছে পাহাড় কর্তন। এসব পাহাড়ের মাটি চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চলছে পাহাড় কর্তন। সারা রাত চলে মাটি পরিবহন। গত সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়-বুলডোজার দিয়ে পুরোটা পাহাড়ের উপরিভাগ কয়েকটি লেয়ারে কাটা হয়েছে। পাহাড়ে কোথাও সবুজের চিহ্ন মাত্র নেই। পাহাড়ের কাটা মাটি পড়ে আশপাশের জলাশয়ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক লক্ষ ঘনফুট মাটি কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। নতুন করে আরো এক লেয়ারে অর্ধেক কাটার কাজ শেষ। এসব মাটি বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়টি ইতালি নাসির কিনেছেন। এরপর থেকে গাছপালা কেটে মাটি বিক্রি শুরু করেছে। রাতের আঁধারে বুলডোজার দিয়ে এখানে মাটি কাটা হয়। রাতেই তা পরিবহন করে। দিনের বেলায় মাটি কর্তন ও পরিবহন কাজ বন্ধ থাকে। কয়েকজন জানান, পাহাড় কাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্ত আমরা কিছু বললে এলাকায় থাকতে পারব না। নির্বিচারে পাহাড় কাটায় সাইফুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, মাটিরাঙার ৯ নং ওয়ার্ডে প্রতিরাতে প্রভাবশালী একটি মহল বুলডোজার ও স্কেভেটর দিয়ে অবাধে পাহাড় কেটে তা ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। রাত ১১টার পর পাহাড় কাটা শুরু করে আজানের আগেই শেষ করে। এসব পাহাড় কাটায় একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিকভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদারছে চলছে পাহাড় কাটা। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে পাহাড় কাটার মূল হোতা নাছির ওরফে ইতালি নাছির পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পাহাড়ে কিছু গর্জন, গামারী, মেহগনি ও কয়েকটা সেগুন গাছ ছিল। গাছ কাটার পর মাটি কেটে সমান করেছি। পাহাড়ে আমি পেঁপে চাষ করব। তবে রাতের আঁধারে পাহাড়ে বুলডোজার দিয়ে মাটি কেন কাটা হয়, সেই বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃলা দেব জানান, পাহাড় কাটার বিষয়টি জেনে অভিযান চালিয়েছি। ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় জরিমানা করা সম্ভব হয়নি।