আগামী ৭ নভেম্বর খাগড়াছড়ির ৪২টি পাকা সেতু একযোগে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসব সেতু নির্মিত হওয়ায় বদলে গেছে পাহাড়ি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জরাজীর্ণ পুরনো বেইলি সেতুর পরিবর্তে নির্মাণ করা হয়েছে পিসি গার্ডার সেতু। নতুন সেতু নির্মিত হওয়ায় পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ হয়েছে। গতি এসেছে পাহাড়ি অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব এবং উত্তর -পূর্ব সীমান্তের জনপদ পার্বত্য চট্টগ্রাম। আয়তনে ৫ হাজার ৯১ বর্গমাইল। ১৮৬০ সালে রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ১৯৮৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে খাগড়াছড়ি আলাদা জেলা হিসেবে মর্যাদা পায়।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ জানায়, ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভিন্নরূপ রয়েছে। উঁচু-নিচু পাহাড়ের পথ ধরে তৈরি হয় সড়ক যোগাযোগ। তবে পাহাড়ি সড়ক যোগাযোগের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল বেইলি সেতু বা ব্রিজ। আপদকালীন সময়ের জন্য তৈরি হওয়া এ সব ব্রিজ দিয়ে কেটে গেছে প্রায় ৪ দশক। এ সব ব্রিজ ছিল যোগাযোগের ‘মরণফাঁদ’। ব্রিজ ভেঙে গেলে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হত। ব্রিজ মেরামতে সময় লাগত ১০ থেকে ১৫ দিন। সড়কের যানবাহনের চাপ বাড়ার সাথে সাথে বেইলি ব্রিজে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। পিসি গার্ডার বা পাকা সেতু তৈরি হওয়ায় বেইলি ব্রিজের ‘ভোগান্তি’ দূর হয়েছে। তৈরি হয়েছে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
খাগড়াছড়ি থেকে মাটিরাঙার তানাক্কাপাড়ার দূরত্ব প্রায় ৪৬ কিমি। এই সড়কে তিনটি বেইলি ব্রিজ ও তিনটি কালভার্ট ছিল। প্রায়শ দুর্ঘটনা হত। বেইলি ব্রিজের পাটাতন প্রায়শ ভেঙে পড়ত। তবে বর্তমানে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় সড়কে এখন নিয়মিত যাতায়াত করছে ট্রাক, বাসসহ মালবাহী ও যাত্রীবাহী পরিবহন। একই অবস্থা খাগড়াছড়ির পানছড়ি ধুদুকছড়া পর্যন্ত ১৬টি বেইলি ব্রিজ ও ২টি কালভার্ট ছিল। সেখানেও এখন পাকা সেতু। ফলে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে।
খাগড়াছড়ি লক্ষ্মীছড়ি সড়ক, খাগড়াছড়ি -দীঘিনালা বাঘাইছড়ি সড়ক, জালিয়াপাড়া, রামগড়, মহালছড়ি সড়কে নির্মিত হয়েছে ৪২টি পাকা সেতু। এতে কমেছে ভোগান্তি। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৪২ টি পিসি গার্ডার সেতু বা পাকা সেতু। সেতু নির্মাণ হওয়ায় কমেছে ভোগান্তি। নিরাপদ হয়েছে পাহাড়ি সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পরিবহন চালকেরা জানান, ‘এক সময় বেইলি ব্রিজের কারণে প্রায় দুর্ঘটনা হত। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। রোগী পরিবহনেও সমস্যা হত। পাকা ব্রিজ হওয়ায় সংকট দূর হয়েছে। এখন আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারি। রোগী পরিবহনে অনেক সময় ভোগান্তি হত। এখন তা আর নেই।
পাকা সেতু নির্মাণের কারণে পাহাড়ি অর্থনীতিতে নতুন গতি এসেছে। সহজেই ফলজ, বনজ পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে মনে করেন খাগড়াছড়ি ট্রাক-মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. জসীম। তিনি আরো বলেন, ‘আগে বেইলি ব্রিজের কারণে দুর্ঘটনা হত। এখন পাকা সেতু হওয়ায় স্বল্প সময়ে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে।’
খাগড়াছড়ি শান্তি পরিবহন মালিক গ্রুপের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল বলেন, ‘পাহাড়ি সড়ক আঁকাবাঁকা হলেও যান চলাচলে তেমন বিঘ্ন ঘটত না; বেইলি ব্রিজের কারণে যত বিপত্তি ঘটত। ব্রিজগুলোতে একাধিক গাড়ি চলাচল করতে পারত না। ৫ টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার যানবাহন বেশি চলাচল করলে ব্রিজ ভেঙে পড়ত। পাকা সেতু নির্মাণ করা এখানকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। সেই দাবি পূরণ হয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বর নতুন নির্মিত ৪২টি সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মজবুত ভিত্তি রচিত হবে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা রোধে পাহাড়ি সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে জানান খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। তিনি আরো বলেন, ‘ ব্রিজ নির্মাণ হওয়ার কারণে স্থানীয় অর্থনীতি গতি পেয়েছে। পাহাড়ি সড়কের উন্নয়নের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণের প্রস্তাব চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে। বাংলাদেশ সরকারে নিজস্ব অর্থায়নে ৪২টি সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১শ ৮৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।