খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব শুরু

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসু শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ির খাগড়াপুরখালে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ। এসময় ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নারীরা মাধবীলতা, অলকানন্দ, জবা, বিজু ফুলসহ নানা রঙের ফুল ভাসিয়েছে। বৈসুর প্রথম দিনের এই আনুষ্ঠানিকতাকে হারি বৈসু বলা হয়। আগামীকাল হবে মূল বৈসু। হারি বৈসুতে গঙ্গাদেবীর উদ্দ্যেশে ফুল ভাসানোর পাশাপাশি পূজাও করা হয়।
সকালে খাগড়াছড়ি সদরস্থ খাগড়াপুর গ্রামবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ফুল পূজার মধ্যে দিয়ে হাড়ি বৈসু অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহধর্মিনী মল্লিকা ত্রিপুরা। উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্‌রু চৌধুরী অপু। ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব একটানা তিনদিন পালন করা হয়। এই তিনদিনের অনুষ্ঠানগুলির নাম হলো হারি বৈসু, বিসুমা বৈসু ও বিসিকাতাল বাআতাদাং বৈসু। হারি বৈসুতে ফুল ভাসাতে আসা কোহেলি ত্রিপুরা জানান, পুরাতন বছরের সকল বাঁধা, বিপদ অমঙ্গল যাতে কেটে যায় এবং আগমন নতুন বছর যাতে সুখী, শান্তি সমৃদ্ধির ভরপুর হয়ে উঠুক হারি বৈসুতে এই প্রার্থনা করা হয়। এছাড়াও বাঁশের মধ্যে কাঁচা হলুদ, কুচাই বথাই, সুকুই (গিলা) ও পবিত্র পানি দিয়ে বিশেষ ধরণের এক পবিত্র জল তৈরি করা হয় যেটা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছিটানো হয়। ত্রিপুরা ভাষায় আমরা যেটাকে বলা হয় ‘কমা বতই’।
মল্লিকা ত্রিপুরা জানান, হারি বৈসু ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী বৈসু উৎসবের একটি অংশ। এই দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘর বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে। ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। গবাদিপশুদের গোসল করানো হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয়। শিশুরা বাড়ি বাড়ি ফুল বিতরণ করে। তরুণ-তরুণীরা প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়। দেবতার নামে নদীতে বা ঝর্ণায় ফুল ছিটিয়ে খুমকামীং পূজা দেওয়া হয়। কেউ কেউ পুষ্পপূজা করে। পুরুষেরা বাঁশ ও বেত শিল্পের প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলায় মেতে উঠে। এদিন এরা দাং, গুদু, চুর, সুকুই, উদেং ও ওয়াকারাই খেলায় অংশগ্রহণ করে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুই প্রু চৌধুরী অপু বলেন, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ হাজার বছর তাদের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা ধরে রেখে বৈসুউৎসব পালন করছে। পার্বত্য জেলা পরিষদ ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকাশ ও সংরক্ষণে সবসময় পাশে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমধ্যম হালিশহরে খাবার বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধফের চালু সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল