খাগড়াছড়িতে উন্নয়ন কাজে আকস্মিক স্থরিবতা

প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘অনিশ্চয়তা’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করেই থমকে গেছে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের সরকারি উন্নয়ন কাজ। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা চলতি অর্থবছরে নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কার কথা জানান।

জানা যায়, ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দফতরে ভৌত অবকাঠামোগত কাজ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বিহার, গীর্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ব্রিজ ও কালভার্ট এমনকি গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ থেমে গেছে। মূলত ইটের অপ্রতুলতার কারণে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও আদালতের আদেশের কারণে চলতি বছর জেলার ইটভাটাগুলো বন্ধ রয়েছে। জানা যায়, ‘জেলার ২৬টি ইটভাটার কোনোটিরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা বন্ধ রাখার বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশনা দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনও তৎপর রয়েছে ইটভাটা বন্ধে। ইটভাটা বন্ধ থাকায় উন্নয়ন কাজ থমকে গেছে।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে খাগড়াছড়ি পৌরসভার তেঁতুলতলা, কুমিল্লাটিলাসহ বেশ কিছু সড়কের কাজ চলমান ছিল। কিন্তু ইট সংকটের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইটভাটা বন্ধ থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে।’

পাহাড়ের অন্যতম উন্নয়ন সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়ি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুজিবুল আলম বলেন, ‘ইট না পাওয়ার কারণে প্রকল্পগুলো মন্থরগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমাদের অধিকাংশ প্রকল্পের ধরণ গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ, ব্রিজ বা কালর্ভাট। ইট না পেলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন। সাধারণত দুর্গম এলাকার উন্নয়নে বেশির ভাগ প্রকল্প নেয়া হয়। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ইট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বিভাগের প্রায় ২৮ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকল্প অনেকটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।’

খাগড়াছড়ি রাজমিস্ত্রি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জানান, ‘পুরো জেলায় অন্তত কয়েক হাজার রাজমিস্ত্রি রয়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে বাড়ি, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজের পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু এই বছর উল্টো চিত্র। ইটভাটা বন্ধ থাকায় নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে।’

খাগড়াছড়ির জেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম সবুজ বলেন, ‘ইট না থাকার কারণে আমরা ঠিকাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারলে জরিমানা গুণতে হবে। ভৌগলিক দূরত্বের কারণে পাশের জেলা চট্টগ্রাম বা ফেনী থেকে ইট এনে নির্মাণ কাজ করা প্রায় অসম্ভব।’

এদিকে সকল নিয়ম মেনে ইটভাটা পরিচালনা করতে চান ভাটা মালিকেরা। খাগড়াছড়ি ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের যেসব শর্ত দিবে তা আমরা মানব। শর্ত মেনে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ভাটাগুলো চালু করতে চাই। কিন্তু প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড়পত্র না পাওয়ায় আমাদের সব ভাটা বন্ধ রয়েছে। অথচ সরকার লাইসেন্স না দিলেও রাজস্ব, ভ্যাট, আয়কর সবই নিচ্ছে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান আহাম্মদ বলেন, ‘পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় সরকার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রেখেছে। এখানে কোনো ভাটারই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এছাড়া চলতি মৌসুমে কোনো ভাটা মালিক আমাদের কাছে ছাড়পত্রের জন্য কোনো আবেদন করেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ভাটা পরিচালনার সুযোগ নেই।’

এই প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে ইট ভাটাগুলো বন্ধ রাখতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। পরবর্তী কোনো বিজ্ঞপ্তি না আসা পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্থানীয় সরকারে আদিলুর, তথ্যে রিজওয়ানা, ক্রীড়া গেল আসিফ নজরুলের কাছে
পরবর্তী নিবন্ধকুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁকে লাখ টাকা জরিমানা