খাগড়াছড়ির হাট-বাজারে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ১৫ জুন, ২০২৪ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

চলতি মৌসুমে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সুবাস ছড়াচ্ছে মৌসুমী ফল কাঁঠাল। মৌসুমের শুরুতেই কাঁঠালে ঠাসা জেলার বিভিন্ন হাটবাজার। বিভিন্ন হাটবাজারে কাঁঠালের বিকিকিনি জমে উঠেছে। স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। জেলার গুইমারা, মাটিরাঙা, দীঘিনালা ও মানিকছড়িতে সবচেয়ে কাঁঠালের বড় হাট বসে। সপ্তাহের দুই দিন মাটিরাঙা ও গুইমারা বাজারে জমে উঠে কাঁঠালের হাট। মঙ্গলবারে গুইমারা আর শনিবারে মাটিরাঙায় কাঁঠালের বড় হাট বসে। হাটের দুইদিন আগে থেকেই বিক্রেতারা প্রত্যন্ত জনপদসহ আশপাশের কয়েকটা উপজেলা থেকে মাটিরাঙা বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসে। এছাড়া অন্যদিকে সোমবার সকাল থেকে গুইমারা বাজারে আসতে শুরু করে সুমিষ্ট কাঁঠাল। সাপ্তাহিক হাটের দিনে মাটিরাঙা ও গুইমারা বাজারে ঢাকাচট্টগ্রামখাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের বিশাল অংশজুড়ে বসে কাঁঠালের হাট।

হাটের দিন নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বেপারিরা এসব বাজারে আসেন। পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত কাঁঠালের বাড়তি চাহিদা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি মাটিরাঙা ও গুইমারার কাঁঠালের হাট ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় পাইকার ও বাগানিরা কাঁঠালের স্তূপ সাজিয়ে বসে আছেন। প্রতিটি স্তূপে রয়েছে শত শত কাঁঠাল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা দরকষাকষি শেষে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মাটিরাঙা বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় এ কাঁঠালের হাটে উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ ছাড়াও লোগাং, তাইন্দং, তবলছড়ি, পানছড়ি, মাইসছড়ি ও ভুয়াছড়ি থেকে ট্রাক ও চাঁদের গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসে। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা দরে। সমতলের জেলাগুলোতে এ কাঁঠালের দাম তিনগুণেরও বেশি।

মাটিরাঙার কাঁঠাল বিক্রেতা মো. নুর নবী জানান, মৌসুমের শুরুতেই তিনি বিভিন্ন বাগান ক্রয় করেন। পরে মে মাসের শেষ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে স্থানীয় বাজার ছাড়াও সমতলের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করে থাকেন। এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন।

নোয়াখালী থেকে আসা কাঁঠালের বেপারি আব্দুল করিম বলেন, এখানকার কাঁঠালের ব্যাপাক চাহিদা থাকলেও এবছর দাম তুলনামুলক বেশী। চাঁদপুরের ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া বলেন, স্থানীয় পাইকারদের কারণে তাদেরকে চড়া দামে কাঁঠাল কিনতে হয়। ফলে তারা লাভের মুখ দেখেন না। মাটিরাঙা পৌরসভার কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, পাহাড়ে কাঁঠাল বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখানকার কাঁঠালের কদর রয়েছে চট্টগ্রাম কুমিল্লাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।

মাটিরাঙা বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, এ মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে মাটিরাঙা বাজার থেকে প্রায় অর্ধশত ট্রাক কাঁঠাল সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। যা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করছে সরকার। এছাড়াও গাড়িতে কাঁঠাল লোডআনলোডসহ অন্যান্য কাজে অন্তত দুইশ শ্রমিক নিয়োজিত থাকায় শ্রমিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে। তবে খাগড়াছড়িতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়েছেন মাটিরাঙা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. শহিদুল ইসলাম সোহাগ। তিনি বলেন, একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা স্থানীয় বাগানীদের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও তা বাস্তবায়নের সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় তারা হতাশ।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বাছিরুল আলম বলেন, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া কাঁঠালের উৎপাদন উপযোগী। প্রতিবছরই ফলন বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৩শ ৫১ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরের গড় উৎপাদন ৩০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৯ শ ৮৭ হেক্টর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে ট্রলারে মিয়ানমারের গুলি, যুবক আহত
পরবর্তী নিবন্ধশিকলবাহায় আনসার আল ইসলামের গোপন বৈঠক, দুই সদস্য আটক