খাগড়াছড়ির পাহাড়ে ঝুলছে আমেরিকার তিশা ফল

দীর্ঘ গবেষণার পর এলো সফলতা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

আমেরিকার সুস্বাদু ফল তিশা ফল চাষ হচ্ছে খাগড়াছড়ির রামগড়ে। দীর্ঘ গবেষণার পর তিশা ফল চাষে সফলতা আসে। খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড় অঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে ঝুলছে তিশা ফল। বাগানের গাছগুলোতে প্রচুর ফুল ও ফল ধরেছে। ফলন শুরু হলে বছরের বারো মাসেই ফুল ও ফল ধরে।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশে একমাত্র রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানেই সর্বপ্রথম এ ভিনদেশি ফল তিশা চাষে সফলতা আসে। ডিমের মত দেখতে বলে তিশা ফলকে এগ ফ্রুট বা ডিম ফলও বলা হয়। শুধু দেখতে নয়, পাকা ফল খেতে অনেকটা চিনি মেশানো সিদ্ধ ডিমের কুসুমের স্বাদের। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ ১০ হতে ১৫ মিটার লম্বা হয়। ফল গোলাকার ও ডিম্বাকার দুই ধরনেরই হয়। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ এবং পাকলে ফলের রং হয় গাঢ় সোনালি থেকে কমলা। ফলের ওজন হয় গড়ে ১২৫ গ্রাম।

রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, সফেদা পরিবারের তিশা ফলের বৈজ্ঞানিক নাম ঢ়ড়ঁঃবৎরধ পধসঢ়বপযরধহধ। ফলটি মূলত দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় উৎপাদন হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এখানে তিশার ৫টি চারা গাছ রোপন করা হয়। ২০০৯ সালে দুয়েকটি গাছে কিছু কিছু ফুল ও ফল আসে। এরপর থেকে গাছগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে পরিচর্যা করা হয়। পরবর্তীতে সবগুলো গাছেই আশানরূপ ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে। গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন ব্লকে রোপন করা হয়।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের টাওয়ার টিলার বাগানের গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। গাছের এক ঢালে ফুল, অন্য ঢালে ঝুলছে তিশা ফল। সারা বছরই ফুল ও ফল ধরে। ঐ ব্লকে আরও অনেকগুলো চারা রোপন করা হয়েছে। টাওয়ার টিলা ছাড়াও আনসার ক্যাম্প টিলা ও আবাসিক ব্লকেও তিশার বাগান রয়েছে।

রামগড়ে দীর্ঘদিন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনকারী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অবঃ) . জুলফিকার আলী ফিরোজ জানান, তার উদ্যোগেই ২০০২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এখানে তিশার চারা গাছ রোপন করা হয়। তার গবেষণা ও পরিচর্যায় বাংলাদেশের মধ্যে রামগড়েই সর্বপ্রথম এ তিশা উৎপাদনে সফলতা আসে।

. জুলফিকার আরও বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া ও মাটি তিশা ফল চাষের জন্য যে উপযোগী তা গবেষণায় নিশ্চিত হয়েছি। সফলতার পর রামগড় গবেষণা কেন্দ্র হতে চারা সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার ও রাঙামাটির রাইখালি গবেষণা কেন্দ্রে রোপন করা হয়। সেখানেও সফলতা আসে। প্রতিটি ফলে চিনি, আমিষ ও চর্বি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লোবিনসহ নানা ধরনের খনিজ উপাদান ও ভিটামিন আছে। ক্যান্সার, উচ্চ রক্ত চাপ, মানসিক অবসাদ ও পেটের অম্বল দূর হয় ফলটি খেলে। তাই বিভিন্ন দেশে তিশা ফল উচ্চ ঔষুধি ফল হিসেবেও পরিচিত।

রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হতে সদ্য বদলি হওয়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. সেলিম জানান, বারি তিশা১ নামে জাত অবমুক্তির জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেলে বারি তিশা১ নামে দেশে এ ফল চাষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিটিজেনস ফোরামের মতবিনিময় সভা
পরবর্তী নিবন্ধবিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ