ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে মাইনি ও চেঙ্গী নদীতে পানি বাড়ায় জেলার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়ন ও জেলার সদরের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় লংগদু ও সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা–লংগদু সড়কের হেড কোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।
মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি বলেন, বিকেল থেকে মাইনি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে। এর মধ্যে মেরুং হেডকোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় লংগদুর সাথে খাগড়াছড়িসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে। চলতি বছরে তিন দফা বন্যায় আমার ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি–সাজেক সড়কের কবাখালিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির সাজেকের সাথে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ধর্মজ্যোতি চাকমা বলেন, পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন ও কবাখালী ইউনিয়নে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
নিচু এলাকা প্লাবিত : এদিকে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। গতকাল ভোর থেকে খাগড়াছড়ি সদরের মুসলিমপাড়া, মেহেদীবাগ, কালাডেবা, গঞ্জপাড়া, ঠাকুরছড়াসহ চেঙ্গী পাড়ের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন নদী ও ছড়ার পাড়ে বসবাসকারীরা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ২য় শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির পৌর শহরের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার জানান, আমার ঘর বাড়ি তলিয়ে গেছে। ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে নাপ্পি বাজারে এসে বসে আছি। কোন সহযোগিতা পাইনি। আরেক বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, এইনিয়ে তিন বার ডুবছে। ভোর থেকে পানি ঢুকা শুরু হয়েছে। কোন সহযোগিতা আগেরবারও পাইনি। ঘর বাড়ি সব শেষ।
শহরের আরেক বাসিন্দা তোফায়েল মিয়া জানান, ঘরের জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। ভোর বেলায় পানি ঢুকেছে। বৃষ্টি না নামলে পানি কমারও সম্ভবনা নেই। বৃষ্টি বাড়লে দুর্ভোগ বাড়বে।
ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় দীঘিনালার মাইনী নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালীর নদী পাড়ের কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, প্রবল বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে।