খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে খাগড়াছড়িতে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। দীঘিনালার মাইনী নদীতে প্রবল স্রোতে তলিয়ে গিয়ে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। তড়িৎ চাকমা (৫৫) নামে ওই ব্যক্তি লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পৌর শহরসহ খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝু্ঁকিতে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। এরমধ্যে কলাবাগান, সবুজবাগ, শালবন, কুমিল্লা টিলাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাহাড় ধসে প্রাণহানি এড়াতে গতকাল রাত থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়। এসময় তিনি সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রের যাওয়ার অনুরোধ জানান। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যে রাতে কয়েকটি এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। খাগড়াছড়ির শালবন এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘গতকাল রাত ১টার দিকে পাহাড় ভেঙে সব মাটি আমার ঘরে ঢুকেছে। সারা রাত জেগে ছিলাম। পাহাড়ের যত মাটিধোয়া পানি আমার ঘরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঘরের ভেতরের মালামাল বেশি থাকায় এগুলো রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারছি না।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘এখানে সব পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এখন বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে থাকা যাবে না। আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে।’
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় আমরা মাইকিং করেছি। এর মধ্যে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদেরকে সেখান থেকে সরে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য বলেছি। সদর উপজেলায় চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য বলছি। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছাড়াও দীঘিনালা, মাটিরাঙা, রামগড়সহ বিভিন্ন উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেও বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে বলা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সকালে জেলার দীঘিনালার মাইনী নদীতে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে স্রোতে টানে নিখোঁজ হয়েছে তড়িৎ চাকমা (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কেতুচন্দ্র কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা তড়িৎ চাকমা নদীতে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ তড়িৎ একই এলাকার মৃত নন্দ লাল চাকমার ছেলে। তাকে উদ্ধার করতে স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ((ইউএনও) অমিত কুমার সাহা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখন নদীতে প্রচুর পানি এবং স্রোত। স্থানীয়রা দুইটি বোট নিয়ে উদ্ধার চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি দল না থাকায় রাঙামাটি থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল রওনা হয়েছে। তারা বাবুছড়ায় পৌঁছানোর পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু হবে।’
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো.এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘আমি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখনো বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তারা যদি দুপুরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে না আসে সেক্ষেত্রে প্রশাসন তাদের জোরপূর্বক আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। প্রাণহানি এড়াতে আমরা এমন সিন্ধান্ত নিব।’
বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি সড়কে মাটি ধসে যাওয়ার শঙ্কা মোকাবেলায় কাজ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জনবল ও মাটি সরানো সরঞ্জাম। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বেলুন মেকার সুভূতি চাকমা জানান, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।