খনন হয়নি, উল্টো ভরাট

রিটেইনিং ওরাল হলেও রাজাখালী খালের কোথাও বাঁধ, কোথাও বর্জ্য ।। অন্যান্য খালের অবস্থাও একই

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১১ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে নগরের ৫৭টি খালের জরিপ করেছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে শহরের পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ রাজাখালী খালকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়। খালটি থেকে ৩৮ হাজার ৫২০ বর্গমিটার মাটি উত্তোলনের প্রস্তাবনা করা হয়েছিল ওই জরিপে।
পরের বছর নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় সিডিএর গৃহীত মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পের আওতায় রাজাখালী খালকে ঘিরেও খননসহ উন্নয়ন কাজ করার কথা। ইতোমধ্যে খালটির দুই পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় রাস্তা। গতকালও খালের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে সে রাস্তা। অর্থাৎ ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী খনন তো হয়নি, ওল্টো ভরাট হয়েছে রাজাখালী খাল। খালটি ভরাট থাকায় সাম্প্রতিক বর্ষণে পূূর্ব বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, বাদুরতলা, পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম বাকলিয়াসহ বৃহৎ এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।
শুধু রাজাখালী খাল নয়। শহরের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম অন্যান্য খালের অবস্থাও প্রায় একই। অর্থাৎ ভরাট হয়ে আছে। অবশ্য সবগুলো খালে বাঁধজনিত সমস্যা নাই। তবে গৃহস্থলী বর্জ্য, পলিথিনসহ নানা ময়লা-আর্বজনায় ভরাট হয়ে আছে খালগুলো। অনেক খালের আবার দুই পাশজুড়ে আছে অবৈধ দখলদারদের আধিপত্য। দখল ও ভরাট হয়ে থাকায় খালগুলো হারিয়েছে তার আসল রূপ। এতে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। ফলে অল্পবৃষ্টিতেই হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। দ্রুত খনন করা না হলে ভারী বর্ষণ হলে আগামীতেও ডুবতে পারে শহর। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রণীত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী নগরে মোট ৫৭টি খাল রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এরমধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ হচ্ছে খন্দকীয় খাল। যার দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটার। দ্বিতীয় দীর্ঘ ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটারের রাজাখালী খাল। নগরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রধান দুই খাল যথাক্রমে চাক্তাই খালের দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার এবং মহেশখালের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার। এদিকে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজ চলছে ৩৬টি খালে। অর্থাৎ ২১টি খালে কোনো কাজই হচ্ছে না। ফলে ওসব খালের অবস্থা আরো বেহাল।
নগরের ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের আলকরণ ১, ২ ও ৩ নং গলি, বাটা গলি, ডা. মান্নান গলি, আর সি চার্চ রোড, ব্যাপিস্ট মিশন রোড, এয়াকুব নগর, বংশাল রোড, টেকপাড়াসহ আশেপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় টেকপাড়া ও বারোমাসিয়া খাল দিয়ে। খাল দুটির বর্তমান চিত্র সম্পর্কে ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব জানান, টেকপাড়া ও বারোমাসিয়া খালে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। স্কেভেটর যাওয়ার জন্য খাল দুটির বিভিন্ন অংশে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পানি যাওয়ার জন্য পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু এসব পাইপ পানি যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত না। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে খাল দুটি ভরাট থাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা হয়েছে ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের বিভিন্ন অংশে। ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়েও তেমন পানি হয়নি।
এদিকে দক্ষিণ বাকলিয়া, চর চাক্তাই, নয়া মসজিদ, মিয়াখান নগর ম্যাচ ফ্যাক্টরি, মিয়াখান নগর ময়দার মিল মোড়, মাস্টার বাড়ি, বালুর মাঠ, তম্বীয়া সেতু এলাকা, ইসমাইল ফয়েজ রোড, আবু জফুর রোড, আমিনুর রহমান রোড এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয় বির্জা খাল দিয়ে। চাক্তাই-হামিদউল্লাহ খান বাজারের পেছন দিয়ে প্রবাহিত হওয়া চাক্তাই খাল থেকে শুরু ‘বির্জা খাল’র। দক্ষিণ ও পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের ডাইভার্শন খাল হয়ে এটি মিশেছে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে। ভরাট হয়ে আছে খালটিও। খালের দুই পাড়ে আছে অবৈধ স্থাপনাও।
গত দুইদিন ধরে বির্জা খাল থেকে মাটি ও ময়লা অপসারণ এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। সরেজমিন দেখা গেছে, খালটিতে গৃহস্থলী বর্জ্য ও পলিথিনের স্তর জমেছে। কয়েক জায়গায় ছোট ছোট গাছপালাও ওঠে গেছে। এসবের উপর দিয়ে হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে খালটি।
চসিকের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বির্জা খালের ১৭ ও ১৯ নং ওয়ার্ডে পরিষ্কার করছি আমরা। খালটির যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে পুরো পরিষ্কার করতে ১৫ দিন লাগবে।
এদিকে গত কয়েকদিন নগরের চাক্তাই খাল, জামাল খান খাল, বদরখালী খাল, চাক্তাই ডাইভার্শন খাল, নোয়া খাল, ডোমখালী খাল, ত্রিপুরা খাল, বামনশাহী খাল, উত্তর খাল, শীতলঝর্ণা খাল, মহেশ খাল, নাসির খাল, পাকিজা খাল, আজব বাহার খাল, নয়ার হাট খাল, গয়নাছড়া খাল-১ ও ২, মহেশখালী খাল, বাকলিয়া খাল, সদরঘাট খাল-১ ও ২, খন্দকিয়া খাল, গুপ্ত খাল, রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি খাল, টেকপাড়া খাল, মোগলটুলী খাল, কলাবাগিচা খাল ও ফিরিঙ্গীবাজার খালের বিভিন্ন অংশে ভরাট হয়েছে।
নগরে চলমান প্রকল্প মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আজাদীকে বলেন, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য যেসব বাঁধ দিয়েছিলাম সেগুলো খুলে দিয়েছি। খালেও আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম করছি। কাপাসগোলা ও তুলাতলী ব্রিজে দুয়েক দিন পর পর পরিষ্কার করতে হয়। সেখানে আজ পরিষ্কার করলে আবার ময়লা এসে ভরাট হয়ে যায়। মুরাদপুরে চশমা খালে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ। কয়েকদিনের মধ্যে শীট ফাইল তুলে দিলে খালের প্রশস্ততা আরো বাড়বে।
রাজখালী খাল বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, রাজাখালী- ১ খালে কচুরিপনা আছে। নিচ দিয়ে পানি চলে যায়। সেজন্য জলাবদ্ধতা হয় না। তাই সেগুলো পরিষ্কার করছি না। তিনি বলেন, চাক্তাই খালের মুখ বড় করতে হবে। ডোমখালের মুখ দ্বিগুণ এবং নোয়াখালের মুখ তিনগুণ বড় করতে হবে। ফিরিঙ্গীবাজার ও টেকপাড়াসহ যেসব খালের জন্য জলাবদ্ধতার সমস্যা হয় না সেখানে মেগাপ্রকল্পের আওতায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলমান আছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ চাঁদ দেখা গেলে ২১ জুলাই কোরবানির ঈদ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬