আলোচিত বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প সংশোধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রস্তাবের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন ইউনিটের মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির চারজন এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।
তারা গতকাল শনিবার প্রকল্প এলাকার পাঁচটি পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। এরপর রাতে বৈঠক করেন চসিকের কর্মকর্তাদের সাথে। এছাড়া আজ রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তাদের।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে সম্পূর্ণ ব্যয় জিওবি ফান্ড বা সরকারি সহায়তা চেয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাবনা বা আরডিডিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল চসিক। এতে প্রকল্প সংশোধনের পাঁচটি কারণ এবং সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি ফান্ড থেকে চাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। অথচ ২৫ শতাংশ অর্থ চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয়ের শর্তে ২০১৪ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
এদিকে চসিকের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কমিটি চসিকের প্রস্তাবনার যৌক্তিকতাগুলো খতিয়ে দেখে একটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি আবারো অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে একনেক সভায়।
কমিটির সাথে গত রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রকল্প সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছি ওই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল গণপূর্ত বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কার কি করণীয় এবং বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোন সমস্যা থাকলে সেগুলোর সম্ভাব্য সমাধান বা উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। প্রকল্পের বিপরীতে মন্ত্রণালয় অর্থও ছাড় করেছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চলছে।
সম্পূর্ণ জিওবি ফান্ড চাওয়ার যৌক্তিতা: প্রকল্পের আরডিপিপিতে সম্পূর্ণ অর্থ জিওবি ফান্ড থেকে চাওয়ার যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়, অনুমোদিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ভবন ক্ষতিপূরণ বাবদ এক হাজার ১১৮ কোটি ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল। ইতোমধ্যে জিওবি ফান্ডের ছাড় হওয়া অর্থ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৯১১ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পের ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না চসিকের। এমনকি চসিকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার অবশিষ্ট ব্যয় ভারও নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে শতভাগ অর্থায়ন সহায়তা প্রদান জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশোধনের অন্য কারণগুলো : এক নম্বর কারণ-পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের আওতায় স্লুইস গেইট অন্তর্ভুক্ত নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই চসিকের প্রকল্প থেকে স্লুইস গেইট নির্মাণের বিষয়টি বাদ দিতে বলা হয় সংশোধিত প্রকল্পে।
দ্বিতীয় কারণ-প্রথম সংশোধনীতে ৫ হাজার ৮০০ মিটার রাস্তা নির্মাণে ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারিত ছিল। বর্তমানে সিডিউল রেইট বৃদ্ধি পাওয়ায় ও কনসালটেন্ট কর্তৃক সার্ভে থেকে প্রাপ্ত ডিজাইন অনুযায়ী সড়ক নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে আকার হচ্ছে ২৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
তৃতীয় কারণ-অনুমোদিত প্রকল্পে ৬টি ব্রিজের ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রস্তাবিত খালের এলাইনমেন্টে ৩টি নতুন সংযোগ সড়কের সৃষ্টি হয় এবং সেখানে ৯টি ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আবার ‘হাই ফ্ল্যাড লেবেল’ বিবেচনায় এসব ব্রিজের উচ্চতা বাড়াতে হবে। এতে ব্যয় বেড়ে হবে ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
চতুর্থ কারণ-অনুমোদিত প্রকল্পে ৫ হাজার ৫০০ মিটার প্রতিরোধ দেয়ালের জন্য ৩৬ কোটি টাকা ধরা হয়। বর্তমানে সিডিউল রেট ও কনসালটেন্টের ডিজাইন অনুযায়ী তা বেড়ে হবে ৯২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
৫ম কারণ-অনুমোদিত প্রকল্পে ২ হাজার ৯০০ মিটার ড্রেন নির্মাণের বরাদ্দ ছিল। বর্তমানে খালের উভয় পাড়ের রাস্তার পাবলিক সাইডে ড্রেন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এতে ড্রেনের দৈর্ঘ্য বেড়ে হবে ৫ হাজার ৫০০ মিটার, নির্মাণ ব্যয় হবে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ চার হাজার টাকায় নতুন খাল খনন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর প্রথমবার সংশোধন করে প্রকল্পটি ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একনেক। বারইপাড়ার চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ্ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পাশে জানালী বাপের মসজিদ হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে নতুন খালটি। খালটির দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে ৬৫ ফুট।