খড় বিক্রি করে লাখ টাকা আয়

মীরসরাই প্রতিনিধি | রবিবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

কৃষিপ্রধান অঞ্চল মীরসরাই উপজেলায় আমন মৌসুমের ধান কাটার পর মাড়াই শেষে খড় দিয়ে গাদা তৈরির রেওয়াজ বহু আগের। কয়েক বছর আগেও জমির মালিকেরা এসব খড় মানুষকে বিনামূল্যে দিয়ে দিতেন। তবে এখন সময় বদলে গেছে। খড়ও হয়েছে মূল্যবান বস্তু। শুষ্ক মৌসুমে মাঠে ঘাস না থাকায় এখন খড়ের চাহিদা ব্যাপক। তাই এখন আর কেউ খড় বিনামূল্যে দিতে রাজি নন। ফলে ধান কাটা শেষে এখন কৃষকদের মধ্যে খড় বিক্রির ধুম পড়েছে। অনেক চাষি এখন ধানের পাশাপাশি লাখ টাকা আয় করছে খড় বিক্রি করেও।

পূর্ব খৈয়াছরা আমনের মাঠে এবার ধান মাড়িয়ে তা ঘরে তোলার পর কয়েকজন কৃষককে মাঠ থেকেই খড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরেজমিনে মাঠে গিয়ে কৃষকদের থেকে জানা গেল, অনেক কৃষক এখন খড় বিক্রি করেও আয় করলে লাখ টাকা।

কৃষক জামান শাহ বলেন, আমি আড়াই কানি জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। আমার নিজের জন্য অল্প খড় রেখে বাকি খড়গুলো ৫১ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। একই মাঠের কৃষক আরিফ জানায়, তিনি ৫ কানি জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। খড় বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।

জানা যায়, খড়ের ক্রেতারা হলেন গরুর খামারের মালিক। বর্ষা বা শুকনো মৌসুমে গরুর খাবারের জন্য অনেক সময় কাঁচা ঘাসের সংকট হয় তখন খড় ও কুড়া এবং ভূসিই গরুর খাবারের জন্য নির্ভরশীল ভরসা। তাই খামারিরা যেভাবেই হোক এই মৌসুমেই গরুর খাবার সংগ্রহ করে রাখে।

পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক ও গরু পালনকারী মুক্তার হোসেন বলেন, আগে আশেপাশে খালি জমি ছিল। ঘাসের অভাব ছিল না। এখন জমি পড়ে থাকে না। ঘাসের জমির অভাব, তাই খড়ের দামও বেড়ে গেছে। বাজারে গরুর খাবারের দাম বেশি। আমার ছয়টি গরু আছে। এরমধ্যে একটি দুধের গাভী। প্রতিদিন ৩০৩৫ আঁটি খড় লাগে। নিজের কয়েক কানি জমির খড়ের সাথে আরো কিছু কিনেও রাখতে হয়।

মিঠাছরা বাজারের গরু ব্যবসায়ী আবুল বশর বলেন, গরুর খাবারের জন্য খড় সবচেয়ে ভালো। এজন্য প্রতি ধানের মৌসুমেই আমাদের খড় কিনতে হয়েছে। আর গাদা তৈরি করেই খড় সংরক্ষণ করতে হয়। যার কারণে গরু ব্যবসায়ীদের খামার কিংবা বাড়ির সামনে খড়ের গাদা দেখা যায়। কিন্তু আগের মতো বাড়িতে বাড়িতে গরু পালন কমে গেছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ জানান, মীরসরাই উপজেলায় গবাদিপশু আছে প্রায় ৯৫ হাজার। খাবার হিসেবে প্রতিটি গরুকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় আঁটি খড় দিতে হয়। বিশেষ করে গাভীর জন্য খড় খুবই উপকারী। এজন্য কৃষকরা বাজার থেকে কেনা গোখাদ্যের চেয়ে ধানের খড়কে বেশি গুরুত্ব দেন। তবে এবার বন্যার দরুন আমন চাষও কমেছে তাই খড়ও কমেছে। তাই চাহিদার তুলনায় খড় কম পাওয়া যাবে বলে কিছুটা বাড়তি দামেই সবাইকে খড় কিনতে হবে।

উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম বলেন, মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে।

তিনি আরও বলেন, একসময় খড়ের অতোটা চাহিদা না থাকায় দামও তেমন ছিল না। সময়ের বিবর্তনে এখন চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় খড়ের দামের দরুন কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধানে অনেক সময় পুষিয়ে না উঠলেও খড়ে লাভ করতে পারছে কৃষকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুকুরিয়া আনছারুল উলুম ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসার সভা
পরবর্তী নিবন্ধআল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মনোভাব নিয়ে দাওয়াতি কাজ করতে হবে