শীতকালীন আগাম সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত শঙ্খচর। চন্দনাইশ–সাতকানিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শঙ্খ নদীর দুই কূলে প্রতি মৌসুমে উৎপাদিত হয় শত শত কোটি টাকার শীতকালীন সবজি। নদীর দুই কূলের দোহাজারী পৌরসভা, ধোপাছড়ি, পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়াসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল জুড়ে চাষাবাদ হয় শীতকালীন মুলা, বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাধাকপিসহ হরেক রকমের সবজি।
শীতকালীন আগাম সবজির মধ্যে প্রতি মৌসুমে কৃষকরা প্রথমেই বাজারে তুলেন মুলা। গত ১ মাস ধরে এসব চরাঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমাণ মুলা বাজারে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটতে শত শত কৃষক খাঁচায় মুলা নিয়ে শঙ্খ নদীপথে বাজারে আসেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মুলার খাঁচায় পূর্ণ হয়ে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার রেলওয়ে স্টেশন ময়দান, যা রাশিয়ার ফিল্ড নামে পরিচিত। প্রতি মৌসুমে কৃষকরা আগাম মুলা বিক্রি করে ভালো দাম পান। বিগত ১ মাস ধরে কৃষকরা প্রতি ভার মুলা (আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ কেজি) ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ ভালো দামে মুলা বিক্রি করতে পেরে ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু বিগত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ মুলার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানালেন কৃষকরা।
গতকাল শনিবার ভোরে দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মুলার খাঁচায় ভরে উঠেছে পুরো মাঠ। ধবধবে সাদা মুলা যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এ সময় কথা হয় শঙ্খ চরের নবীন কৃষক সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের আবু বক্করের ছেলে মোহাম্মদ মারুফের সঙ্গে। তিনি জানান, গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করে মুলার দাম নেমে এসেছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও ভালো মানের এক ভার মুলার দাম ছিল ৪ হাজার টাকার উপরে। অথচ জমি তৈরি, চারা রোপণ, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, মুলা তুলে ধুয়ে বাজারে নিয়ে আসা পর্যন্ত প্রতি ভার মুলায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। সামনে দাম আরো কমবে বলে জানান তিনি। এভাবে মুলার দাম কমে যাওয়ায় আগাম মুলা চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এতে শত শত কৃষক হতাশায় ভুগছেন। গত মৌসুমেও মুলার দাম কমে যাওয়ায় শত শত কানি জমির মুলা তুলে ফেলে দিয়েছিলেন কৃষকরা।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ আজাদ হোসাইন জানান, মুলত শঙ্খ নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হওয়ার আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ শুরু করেন। প্রায় সব কৃষকই একই সাথে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করায় এবং একই সাথে বাজারে তুলার প্রতিযোগিতা দেয়ায় অনেক সময় সবজির দাম কমে যায়। চলতি মৌসুমেও প্রায় সব কৃষক একই সাথে আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম মুলার চাষাবাদ করেছেন এবং বাজারেও আনছেন একই সময়ে। পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চল থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। হয়তো এ কারণে বর্তমানে মুলার দাম পড়ে গেছে। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে যাচাই–বাচাই করে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হবে।