এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের ঘটনায় গতকালও ক্ষোভে উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম আদালত অঙ্গন। এ ঘটনার জেরে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী টানা দ্বিতীয় দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন আইনজীবীরা। আগের দিনের মতো গতকালও ৭৪ টি আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কার্যত অচল ছিল চট্টগ্রাম আদালত।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত সম্মুখের অদূরে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের হাতে নৃশংভাবে খুন হন এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ।
গতকালও আদালত পাড়ায় নানা সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করেছে। খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এসব মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে। পাশাপাশি ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়। আইআইইউসি, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকরাও নানা ব্যানারে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। এতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে নানা রকমের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের সদস্যরা নৃশংসভাবে আমাদের ভাই এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করেছে। আমরা জড়িত সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ করাসহ বাদ জোহর মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় কোর্ট হিল জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সভাপতি যথাক্রমে সালেহ্উদ্দিন হায়দার সিদ্দিকী, মো. কফিল উদ্দিন চৌধুরী, মুহাম্মদ এনামুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মো. ফয়েজ উল্লাহ, জিয়াউদ্দিন আহম্মদ, মুজিবুর রহমান ফারুক, মো. আবদুর রশিদ, সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল কাদের, সহসাধারণ সম্পাদক মো. কাশেম কামাল, অর্থ সম্পাদক কাজী মো. আশরাফুল হক আনসারী, পাঠাগার সম্পাদক আহমদ করিম কবির, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারুফ মো. নাজেবুল আলম, সিনিয়র আইনজীবী কাজী সাইফুদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী, আবদুল খালেক শাহজাহান, আবদুস ছাত্তার, শামসুল আলম, শামসুল ইসলাম কালাম, মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী ও মুহাম্মদ কবির হোসাইন প্রমুখ। মাহফিল শেষে শহীদ এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন কোর্ট হিল জামে মসজিদের ইমাম গোলামুর রহমান তায়েফ। এদিকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মুখে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুনেছি চিন্ময় দাশকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামিকে কোন আইনে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে? এছাড়া মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনা এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই আইনজীবী নেতা। নগর পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। বক্তব্যে চিন্ময়কে প্রিজনভ্যানে তোলার পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, প্রিজনভ্যানে চিন্ময় দাশের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল–এসব প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন এডভোকেট মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার সময়ে ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল’ উল্লেখ করে তাদের কেন ডাকা হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ইসকনের সন্ত্রাসীরা প্রিজন ভ্যান ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। আমরা পুলিশকে নিষ্ক্রিয় দেখেছি। প্রিজনভ্যান ফেলে তারা নিরাপদ স্থানে দূরে দাঁড়িয়েছিল। মানববন্ধনে চিন্ময় দাশকে সব মামলায় আসামি করারও দাবি জানান সমিতির সভাপতি। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাফর ইকবাল, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহাদ মুস্তফা, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।