ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিকে তাকিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার

ট্রেড লাইসেন্সের সঙ্গে ছয়গুণ হারে উৎসে কর

| মঙ্গলবার , ৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের আয় কমে যাওয়ায় অনেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা নবায়ন করছেন না। এ কারণে সিটি করপোরেশনেরও আয় কমে যাচ্ছে। লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত আয়কর ও ভ্যাট এজন্য দায়ী বলে বলা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। গত ৩ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘৫০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর ৩ হাজার টাকা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘নগরে যে কোনো বৈধ ব্যবসার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতি অর্থবছরে এসব লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে তিন হাজার টাকা উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় লাইসেন্স গ্রহীতাকে; যা সর্বনিম্ন লাইসেন্স ফি’র ছয় গুণ।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, এ উৎসে কর ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো। চসিকের দাবি, অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের ভয়ে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স করতে চান না। এতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় ট্রেড লাইসেন্স ফি থেকে উৎসে কর প্রত্যাহার চায় চসিক। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল সংস্থাটি। মন্ত্রণালয়ও এতে সম্মতি জানিয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি পত্র দেয়। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের বিপরীতে যৌক্তিকভাবে শতকরা হিসেবে উৎসে কর ধার্য করা প্রয়োজন।’
আমাদের দেশে কতগুলো বিষয়ে একেবারে গাঁজাখুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৫০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর ৩ হাজার টাকা উৎসে কর তেমনি এক সিদ্ধান্ত। জানা যায়, মূলত এই কর বাড়ানো হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে। ২০১৯ সালের ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠিয়েছিল। প্রতিবেদনে লাইসেন্সের বাড়তি ব্যয়ের প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নতুন হারের কারণে ব্যবসার খরচ বাড়বে এবং ব্যবসায়ের পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই হার কার্যকর হলে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা শুরুর সূচকে ব্যয় বাড়বে অন্তত ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তবু এ সিদ্ধান্ত অটল রাখা হয়।
করোনায় ক্ষুদ্র দোকানদাররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দীর্ঘদিন বিধিনিষেধ থাকায় দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়েছে এদের। এ বিবেচনায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উৎসে কর, ভ্যাট ও বিলম্ব জরিমানা মওকুফ করা উচিত। এরকম সিদ্ধান্ত যদি সরকার গ্রহণ করে, তাহলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে নতুন লাইসেন্স নেবেন ও পুরনো লাইসেন্স নবায়ন করবেন- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘ট্রেড লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। কিন্তু প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে তিন হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হয়। সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এটাকে অনেক ব্যবসায়ী অজুহাত হিসেবে দেখান। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সেটা এনবিআরের বিষয়। তাছাড়া সেটা আইনেও আছে। ব্যবসায়ীদের সেটা মানতেই হবে। তারপরও বিষয়টি বিবেচনার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি’। যেভাবেই হোক, চিঠি পেয়ে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছে বলে আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চসিকের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি পত্র দেয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, উৎসে কর অধিক হওয়ায় ছোট ছোট ব্যবসায়ীগণ ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব আয় ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। সুতরাং ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ফি’র ওপর যৌক্তিকভাবে শতকরা হারে উৎসে কর ধার্য করা প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেয়ে এবার কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা দেখার বিষয়। আশা করি, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিকে তাকিয়ে সরকার ইতিবাচক পথে অগ্রসর হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে