মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, বিশ্ব সভ্যতায় এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার প্রবক্তা ও প্রবর্তন এই চট্টগ্রাম থেকেই উদ্ভাবিত হয়েছে। এই মানবিক অর্থনৈতিক দর্শন বিশ্বকে চমকিত ও আশান্বিত করেছে। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক কিংবা পুঁজিবাদী বিশ্ব–সর্বত্র অনুসন্ধিৎসার সঙ্গে এই নব্য অর্থনীতির জ্ঞান ও ধারণা আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম কলেজ আয়োজিত ৭ম ইকনোমিক্স অলিম্পিয়াড চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াডের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান বক্তা ছিলেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। সেন্টার ফর ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভ (সিওয়াইএ) এর আয়োজনে অলিম্পিয়াডে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মোহাম্মদ মনসুরুল হক, শিক্ষাবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দার খান, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (শিক্ষা) মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াড কার্যকরী কমিটির সভাপতি আল আমিন পারভেজ, সেন্টার ফর ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা সাইদ খান সাগর, চট্টগ্রাম ইকোনমিকস অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক কাজী সদরুল্লাহ রাকিব।
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, মাইক্রোইকোনমিক্স, সামাজিক ব্যবসা এবং সমস্যার সমাধানভিত্তিক ব্যবসা– এই ধারণাগুলোর জন্মও হয়েছে চট্টগ্রামের মাটি থেকেই। এখানেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার সূচনা, যা পরবর্তীতে ‘দরিদ্রদের জন্য ব্যাংকিং’ এবং মাইক্রোক্রেডিট নামে বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করে। এখান থেকেই নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণাটি বিশ্বজয় করে। আজকের দুনিয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানভিত্তিক উদ্যোগ–যেমন ‘প্রবলেম সলভিং বিজনেস’ ধারণাও–চট্টগ্রাম থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ‘ট্রাস্ট–বেইজড ব্যাংকিং’ ধারণা। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেখানে জামানত, সম্পদ ও প্রতিশ্রুতি মুখ্য, সেখানে ট্রাস্ট–বেইজড ব্যাংকিং মানুষের বিশ্বাসকে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করে। এই অনন্য ধারণাটিও চট্টগ্রাম থেকেই উৎসাহিত হয়েছে এবং এটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নৈতিক অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এই নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তত্ত্ব ও প্রয়োগই বাংলাদেশকে প্রথম নোবেল জয়ের গৌরব এনে দিয়েছে। আমাদের গ্রামীণ ব্যাংক ও এর উদ্ভাবক প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন।
ফারুক ই আজম বলেন, বিশ্ব ব্যবসা জগতেও আমরা অভিনব বিকল্প দিয়েছি। ব্যক্তিগত মুনাফা–কেন্দ্রিক ব্যবসার সমান্তরালে সমাজকল্যাণভিত্তিক সামাজিক ব্যবসার দর্শন এক অনন্য মানবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, যা সারা বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক সাম্য ও মানবিকতা বিকাশে এই পদ্ধতি প্রতিটি মানুষের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াড নিছক এনজিও কাজ কিংবা ইভেন্ট নয়। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। একটি সুগঠিত জাতি গঠন করতে হলে নাগরিকদের অর্থনৈতিকবোধ প্রগাঢ় হওয়া বাধ্যতামূলক। ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াড দেশজুড়ে সেই সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। তিনি চট্টগ্রামের মানুষদেরকে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে আরো বেশি সহায়ক ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।
মিজানুর রহমান বলেন, অলিম্পিয়াড হলো তাত্ত্বিক পড়াশুনা আর বাস্তবিক প্রয়োগের মাঝে যোগসূত্র তৈরিকারী। অলিম্পিয়াডে যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের জীবনবোধ ও বাস্তবিক জ্ঞান অন্যদের চেয়ে ভালো হয়। এই অলিম্পিয়াড আরো সমৃদ্ধ হোক।
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই অলিম্পিয়াডে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনলাইনে আঞ্চলিক বাছাই পর্ব শেষ করে জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত হয় এই পর্বটি। বৃষ্টিমুখর সকালে চট্টগ্রাম কলেজে সকাল ৮টায় শুরু হয় অলিম্পিয়াড পর্ব। এতে অংশ নেন ৩০০ শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে স্কুল–কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, এই দুই ভাগে আলাদা করে পুরস্কার দেওয়া হয়। অলিম্পিয়াড শেষে আয়োজিত হয় বক্তব্য ও প্রশ্নোত্তর পর্ব। অলিম্পিয়াডে স্কুল–কলেজ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সুহা আহসান, দ্বিতীয় হন গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের তানভীর ইসলাম, তৃতীয় হন প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মিসবা জাকারিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে প্রথম হন চবির এ এম আবির হাসান, দ্বিতীয় হন চবির জোনায়েদ সামী, তৃতীয় হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাতিন ইলহাম। স্কুল–কলেজ পর্যায়ে বিজয়ীরা ন্যাশনাল ক্যাম্পে অংশ নেবেন, সেখান থেকে নির্বাচিতরা যাবেন আজারবাইজানের বাকুতে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকস অলিম্পিয়াডে।