সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করে কারাদণ্ড পাওয়ার পর প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমা পাওয়া ৫৭ বাংলাদেশির মধ্যে ১২ জন আজ শনিবার রাতে দেশে ফিরছেন।
দুইটি পৃথক ফ্লাইটে তারা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
তাদেরকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো হয়। এসময় দেশে ফিরতে পেরে তারা অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিমানবন্দরে নেমে তারা আরো বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে আটক হয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে ফোনে উদ্যোগ না নিলে সাজাভোগের আগে আমাদের পক্ষে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ছিল না।
আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কারাভোগ করেছি। আমরা আমাদের এই দেশটাকে বৈষম্যমুক্ত দেশ হিসেবে দেখতে চাই। তারা অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার যে কোন উদ্যোগে প্রয়োজন জীবন দিতেও প্রস্তুত বলেও বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের জানান।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে শাস্তির পর ক্ষমা পাওয়াদের ১২ জন বাংলাদেশি এয়ার এরাবিয়ার পৃথক দুটি ফ্লাইটে গতরাতে চট্টগ্রাম হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
এরমধ্যে আবুধাবি থেকে আসা ফ্লাইটে ১১ জন এবং শারজা থেকে আসা ফ্লাইটে ১ ছিলেন। শারজা থেকে আসা ফ্লাইটটি রাত ৮টা ১০ মিনিটে এবং আবুধাবী থেকে আসা ফ্লাইটটি রাত ৮-৩৭ মিনিটে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তারা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বাড়ি চলে যান বলেও তিনি জানান।
আজ রাতে দেশে ফেরা ১২ জন হলেন, নগরীর কোরবানিগঞ্জের সাঈদুল হকের পুত্র জিয়াউল হক, বায়েজিদ বোস্তামীর জালালাবাদের সালেহ বাজার এলাকার
মোহাম্মদ ইউসুফের পুত্র মইনুল ইসলাম আইমান, সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকার উত্তর মাহমুদাবাড় গ্রামের মোহাম্মদ রুস্তম আলীর পুত্র মোহাম্মদ রকিবুল হাসান বাবু, হাটহাজারীর গড়দুয়ারার আবুল কালামের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম ও মির্জাপুরের মোহাম্মদ জসিমউদ্দিনের পুত্র মাহরাজউদ্দিন রাসেল, পূর্ব মেঘলের মোহাম্মদ শরীফের পুত্র মোহাম্মদ হারুন, রাউজানের কদলপুরের সামশুল হুদার পুত্র মোহাম্মদ কাউসারউদ্দিন, পশ্চিম রাউজানের জহুর মিয়ার পুত্র এসকান্দর হোসেন ও হাজী মাহমুদুল হকের পুত্র সাঈদুল হক, নোয়াপাড়ার গুজরা মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ শাহজাহান, বোয়ালখালীর কানুনগো পাড়ার কাজল কান্তি দের পুত্র বিশ্বজিত দে এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়ার গোলাম মোস্তফার পুত্র আফসারুল আমীন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। সেসময় ৫৭ জনকে আটক করে দেশটির পুলিশ। মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী, দেশটিতে বিক্ষোভ করা অবৈধ।
ইউএই’র রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ওয়াম) তখন জানিয়েছিল, আটক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তারা ‘বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন রাস্তায় বড় আকারের মিছিল সংগঠিত করেছে’।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি আদালত। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে অন্তর্র্বতী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় গত ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তখন টেলিফোনে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের মুক্তির অনুরোধ জানিয়েছিলেন ড. ইউনূস।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে কারাগারে বন্দি ওই ৫৭ জন বাংলাদেশির সাজা মওকুফ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
মুক্তি পাওয়ার পর গতকাল ৫৭ জনের মধ্যে ১২ জন দেশে ফিরে আসেন।