ক্ষমতায় গেলে ‘ইনসাফভিত্তিক’ দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি তারেকের

| সোমবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে মহানবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণে ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বিএনপি বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারেক রহমান। গতকাল রোববার বিকালে জাতীয় ইমাম ও খতিব সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ে আমাদের মহানবী (সা.)-কে যারা অপছন্দ করত তারাও মহানবীকে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে মানত এবং বিশ্বাস করত। মহানবীর ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে মুসলমানঅমুসলমান বিশ্বাসীঅবিশ্বাসী কারও মধ্যেই কোনো সংশয় ছিল না। মহানবীর সেই ন্যায় পরায়ণতার আদর্শ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় বিএনপির মূল মন্ত্র হবে ইনশাআল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা। খবর বিডিনিউজের।

মহানবীর ন্যায়পরায়ণতার আদর্শে উজ্জীবিত একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি দেশের সকল সম্মান্বিত ইমামখতিবমুয়াজ্জিনআলেমওলামাপীরমাশায়েকদের দোয়া ও সমর্থন চায়। তারেক রহমান বলেন, আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আমার মায়ের জন্য দোয়া চাই, আমার দলের নেতাকর্মীসমর্থক এবং সর্বোপরি দেশবাসীর জন্য দোয়া চাই।

আগারগাঁও বাংলাদেশচীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় ইমাম খতিব সম্মেলন২০২৫ শীর্ষক এ সম্মেলন হয়। এতে ইমাম ও খতিবদের ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন কমিটির সদস্য সচিব মুফতি আজহারুল ইসলাম।

ইমামখতিবমুয়াজ্জিনদের দাবি অগ্রাধিকার পাবে: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের উপস্থাপিত দাবির বেশ কয়েকটি অগ্রধিকারভিত্তিতে পূরণ করার সব রকমের সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনারা ইমামখতিবমুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। আপনাদের এই দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক মসজিদে মসজিদ কমিটির ইচ্ছাঅনিচ্ছার উপরে ইমামমুয়াজ্জিনের চাকরি নির্ভর করে। আমি মনে করি এটি হওয়া উচিত নয়, এটি হতে পারে না। এটিকে আমি ইমামমুয়াজ্জিনদের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণ বলে মনে করি। আগামিতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সার্ভিস রুল প্রণয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে ইমামখতিবদের একাধিক কমিটি করে প্রতিটি দাবির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ বিএনপিকে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির দর্শন : তারেক রহমান বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে বিএনপি এমন একটি কল্যাণমূলক সমাজ, সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে যে রাষ্ট্র সমাজে মুসলমানগণ নিঃসংকোচে কোরআনসুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন, নির্ভয়ে নিরাপদে এবাদত বন্দেগি করতে পারবেন। একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষেরাও নিরাপদে নিশ্চিন্তে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করতে সক্ষম হবে। বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপোস করেনি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও করবে না। তিনি বলেন, আপনারা জানেন পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের দল যারা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে নিজেদের ইচ্ছেমতন সংবিধান রচনা করেছিল, সেই সংবিধানে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাঙ্‌ক্ষার প্রতিফলন তখন ঘটেনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পাবার পর সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বর্তমানে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস’ কথাটি এভাবে রাখা হয়নি। কেন এভাবে রাখা হয়নি? এই প্রশ্নটি আজ আমি আপনাদের সামনে দেখে গেলাম।

তিনি বলেন, বিএনপি বরাবরই ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী যেকোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার ইসলাম, মুসলমান এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে রাষ্ট্র ও সমাজে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছিল। আপনাদের এখানে যারা আজকে উপস্থিত আছেন আপনাদের অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে যে, ২০২৪ সালে পবিত্র রমজান মাসে হঠাৎ করে মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ইফতার মাহফিল আয়োজনের উপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী, ইসলামের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। সেই সময় বিএনপি অপতৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতাকর্মীসমর্থকদের উপরে হানাদার বাহিনীর মতন ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছিল। গণহত্যার প্রতিবাদে এবং হেফাজতে ইসলামের সমর্থনে বিএনপি সারাদেশে দুইদিন হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল তখন।

ইমামখতিবশিক্ষার্থীদের বাইরে টেকসই উন্নয়ন হবে না: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যেকোনো পেশা কিংবা চাকুরির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের গুরুত্ব বিবেচনা করে কাওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ‘দাওরে হাদিস’ অর্থাৎ ‘তাকমিল সনদকে’ মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছিল। দেশে বর্তমানে কওমি ও আলিয়া সরকারি বেসরকারি বা নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত সব মিলিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৫০ হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে সব মিলিয়ে মসজিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ বা তারও কিছু বেশি হতে পারে। এই মসজিদগুলোতে কম বেশি প্রায় ১৭ লাখ ইমামখতিবমুয়াজ্জিন ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন। লক্ষ লক্ষ মসজিদ মাদ্রাসায় ইমামমুয়াজ্জিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিমূলক কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশ কখনোই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ বাস্তবতা থেকে বিএনপি আগামী দিনের কর্মসূচিতে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

ইমামখতিবরা সমাজ সংস্কারক : তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে সারাদেশে ইমামখতিবমোয়াজ্জিনগণ প্রত্যেকেই সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আপনারা মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক শুদ্ধির জন্য নিজেদের সময় ব্যয় করেছেন বা করছেন। ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত একটি নৈতিক সমাজ গঠনের জন্য গঠনের জন্য এটি আপনাদের একটি প্রশংসনীয় অবদান। বিএনপি মনে করে সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় বা ভূমিকা পালনকারী ইমামখতিবমুয়াজ্জিনগণ যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন বাস্তবতায় ইমামখতিবমুয়াজ্জিনদের মধ্যে যারা আর্থিক অনটনে রয়েছেন তাদেরকে প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির একটি পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আল্লাহর রহমতে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ইমামমুয়াজ্জিনদেরকে সম্মানী দেওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে ইনশাল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব। একই সঙ্গে ইমামমুয়াজ্জিনদেরকে আর্থিকভাবে আরো স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ইমামমুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে আরো বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ, দুযোর্গ প্রতিরোধে ইমামমুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করার বিভিন্ন চিন্তাভাবনা বিএনপির থাকার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে কোরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোনো কাজ হবে না : সালাহউদ্দিন
পরবর্তী নিবন্ধনোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি, বাসি গ্রিল ও চপ বিক্রি