ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, দ্রুত সংস্কার করতে চায় চসিক

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ১ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চলতি মৌসুমে ভারী বর্ষণে নগরের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে ১৫দিন আগে সংস্কার কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং কারফিউ জারিসহ পরিস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক থাকায় থমকে যায় এ সংস্কার কাজ। এর মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টিও হয়েছে। ফলে সংস্কার কাজে আরো বেগ পেতে হয় চসিককে। একইসঙ্গে বৃষ্টিতে নতুন করে ক্ষতি হয়েছে বহু সড়কের।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১১ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এরপর ১৪ জুলাই থেকে ক্ষতি হওয়া সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করে সংস্থাটি। বহদ্দারহাট থেকে সিডিএ এভিনিউ সড়ক, টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার মোড়, আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস এলাকা, জাকির হোসেন থেকে এ কে খান রোড, বায়েজিদ থেকে ষোলশহর ২নং গেট রোড, বোটক্লাব থেকে এয়ারপোর্ট সড়কে এ সংস্কার কাজ চলে।

পরবর্তীতে ১৫ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাপ বাড়তে থাকে নগরে। এদিন ষোলশহরে ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ১৬ জুলাই মুরাদপুর এবং ১৭ জুলাই বহদ্দারহাটে সংঘর্ষ হয়। এ দুইদিনের সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে। এরপ্রেক্ষিতে ২১ থেকে ২৩ জুলাই তিনদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় সংস্কার কাজ। এসময় যানবাহনের চাপে ক্ষতি হওয়া সড়ক আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ২৬ জুলাই থেকে গত কয়েকদিনে অল্প পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। এতে নতুন করে আরো বহু সড়ক ক্ষতি হয়।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী শাহীনউলইসলাম আজাদীকে বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া সড়ক সংস্কারে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। মাঝখানে কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় আরো খারাপ হয়ে গেছে। তাছাড়া মাঝখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষতি হওয়া সড়ক সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে আজও আমরা বসেছি। দ্রুত সংস্কার করে ফেলবে। ইতোপূর্বে প্রণীত তালিকার কত শতাংশ সংস্কার হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ২০২৫ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে গত রোববার সরেজমিন পরিদর্শনে সদরঘাট স্ট্রান্ড রোডে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত দেখা গেছে। এছাড়া সম্প্রতি পরিদর্শনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে রেলক্রসিং এলাকা, ইপিজেড এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্ত দেখা গেছে। এছড়া ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ বা অলিগলির সড়কগুলোর বিটুমিন, ইট, বালি ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় গর্ত। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে চসিকের প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডে ১ লক্ষ ২১ হাজার ৮১৪ বর্গমটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ বর্ষায়। নষ্ট হওয়া সড়কের প্রস্থ ১০ ফুট ধরলে ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৪২ কিলোমিটার। অর্থাৎ চলতি বর্ষায় এখন পর্যন্ত শহরের ৪২ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছে।

পুরো শহরকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রস্তুতকৃত ওই তালিকা অনুযায়ী, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ৩নং পাঁচলাইশ, ৩৬ নং গোসাইলডাঙ্গা, ২৬নং উত্তর হালিশহর এবং ৩৭নং মধ্য হালিশহর, এই পাঁচ ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক নেই। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ২ নম্বর অঞ্চলের অধীন ৫নং মোহরা ওয়ার্ডে। যার পরিমাণ ২৫ হাজার ৯৭৪ বর্গমিটার। এছাড়া ৪নং অঞ্চলের অধীন দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে সবচেয়ে কম ৪১ দশমিক ৮২ বর্গমিটার সড়ক ক্ষতি হয়।

জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্ল্যান্ট থেকে তৈরি মিঙার (ইট, বালি, সিমেন্টে, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে বর্ষায় ক্ষতি হওয়া সড়কের ছোট ছোট গর্ত ভরাট করে থাকে। সংস্থাটির ভাষায় এটি প্যাঁচওয়ার্ক। চলতি ২০২৪২০২৫ অর্থবছরে প্যাঁচওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ২০২৩২০২৪ অর্থবছরে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও খরচ হয় ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ওই বছর প্রকল্পের আওতায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয় বেশি। তাই প্যাঁচওয়ার্কে কম খরচ হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরবরাহ সংকটের অজুহাত, ফের বাড়ল ডিমের দাম
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬