খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে দিবা। গালিবের সাথে সংসার বাঁধার পর থেকেই অভ্যাসটা ওতোপ্রোতো ভাবে মিশে গেছে।সকালে চা নাস্তা আর রাতের ডিনার।বাচ্চারা যার যার মতো খেয়ে নেয় দীবা অপেক্ষা করে গালিবের জন্য। আগে দিনে বিশ পঁচিশ কাপ চা খেতো দীবা ডায়েট কন্ট্রোল করার কারণে দুকাপে নামিয়ে এনেছে এবং অনেক খাবার আইটেম থেকে বাদ দিয়েছে। কফি তার পছন্দ নয় চা না পেলে তখন কফি খুব তাচ্ছিল্যের সাথে খায়।গালিব অফিসে যাবার আগে এককাপ কফি তাকে বানিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে পুরো কফিটা না খেয়ে দীবার জন্য কিছুটা রেখে যায়। ফেলে না দিয়ে খেয়েই নেয় দীবা। অবশ্য এর পিছনে দীবার একটা যুক্তি আছে।আগে দীবা প্রচুর খেতো দশ বছর খাবার কমিয়ে প্রায় দশ নয় কেজি ওজন কমিয়েছে। মেয়েকে স্কুলে হেঁটে আনতে যাওয়া। সন্ধ্যার পর গুলশান মার্কেটে হাঁটতে হাঁটতে কিছু কেনা কাটা করা এই ভাবে ঘরের কাজ নিজের হাতে করা। যার প্রধান কারণই হলো ওজন কমানো। গালিবকে হাজার বার বলেও লাভ হয়নি অনন্ত সকালে একটু হাঁটার অভ্যাস না শোনার ফলে দিনে দিনে ওজন বেড়েছে।আসলে ওকে বলেইবা কি। সাংবাদিকতার চাকরী সকালে গেছে আসছে দুটো তিনটেয় ঘুমাতে গেছে আরো দু তিন ঘন্টা। আসলে ব্রেনেরতো একটা রেষ্ট এর দরকার।
যাই হোক খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে দীবা। গালিবের পছন্দর রান্না। দীবারও ভীষণ খিদে পেয়েছে। গালিব আসলেই একসাথে খাবে।এতো দিনের অভ্যাস সহজে যায়না। আবার রাত করে খাবার খেলে দীবার সমস্যা হয়।তবু কিছু করার নেই। সারাদিন বাইরে থেকে কি খায় না খায়। একসাথে বসে সারাদিনের জমানো কথাগুলো শেয়ার করা যায়।আড়াইটা বেজে গেছে। গালিবের আসার কোন লক্ষণ নেই। বাচ্চারা খেয়ে শুয়ে পড়েছে। এবার দীবার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। আর কতো অপেক্ষা করা যায় মোবাইলটা হাতে গালিবের নং এ ফোন দেয়। খুব কাছ থেকে ফোনটা বেজে ওঠে রিসিভ হয়না। আবারও ফোন করে। হঠাৎ টের পায় ফোনটা ড্রয়ারে বাজছে। এতোক্ষণ দীবা একটা ভ্রমের মধ্যে ছিলো। গালিব আর কোনদিন ফিরে আসবে না। বলবেনা ম্যাডাম সারাদিন কি করে কাটালে। বুকের মধ্যে একটা পাথর চাপা পড়লো। গালিবকে ছাড়া তার জীবন কি ভাবে কাটবে সে ভাবনা নয়। গালিবের অকাল প্রয়াণ ভাবতে গেলে এক অন্ধকার গহ্বরে ডুবে যায় সেখান থেকে কোনদিন তার মুক্তি নেই। নিজেকে আর আটকাতে পারেনা দীবা। গুমোট বাতাসের মতো তার বুকের ভাঁজে ভাঁজে থাকা অমলিন স্মৃতি কান্না হয়ে ভেঙ্গে দেয় বন্ধ জানালা দরজা। আহা জীবন কতো সহজে কাছের মানুষটাকে মুহূর্তে আড়াল করে ফেলে।