ক্ষণজন্মা খনা

পান্না আহমেদ | শনিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ উচিত কথা নিয়ে ভাবতে ভাবতে খনার কথা মনে হলো। তাই খনা নিয়ে ভাবনা খনা বা খনার বচন আমাদের গ্রামে গঞ্জে খনার বচন অত্যন্ত পরিচিত। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত খনার বচন সাধারণ মানুষকে অনেক জ্ঞান দেয় যা আমাদের ভাষার প্রাচীন সম্পদ। খনার বচনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে আমাদের গ্রামীণ জীবন ও আধুনিক কৃষি তত্ত্বে তার চেয়ে বেশি অবদান কেউ রাখতে পারেনি। খনা প্রাচীন বাংলাদেশের একজন বিদূষী জ্যোতিষী ছিলেন! তার সম্পর্কে বাংলা এবং উড়িয়া ভাষায় কিংবদন্তী আছে! বলা হয় খনা লংকা দ্বীপের রাজকুমারী। কিংবদন্তী অনুযায়ী খনা লীলাবতী নামেও পরিচিত। শ্বশুর বরাহ আর স্বামী মিহির সহ তারা ছিলেন জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ। তার অগাধ জ্ঞানের কারণে তিনি রাজ সভায় আমন্ত্রিত হন এবং শ্বশুর সহ অনেক সভা পণ্ডিতের ঈর্ষার কারণ হয়ে পড়েন। এমনকি তিনি শ্বশুর পণ্ডিত বরাহের জ্যোতিষশাস্ত্রীয় বহুদিন দুঃসাধ্য সমস্যার সমাধান দিতে লাগলেন। এতে তিনি অপমানিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। তিনি পুত্র মিহিরকে আদেশ দেন খনা বা লীলাবতীর জিহ্বা কেটে ফেলার! কিংবদন্তী অনুযায়ী নিরুপায় মিহির তার জ্যোতিষশাস্ত্রে বিদূষী স্ত্রীর জিহ্বা কেটে ফেলার আগে তাকে তার জ্ঞানের কিছু কথা বলার সুযোগ দেন। তখন তিনি আমাদের দেশ সম্পৃক্ত কৃষি আবহতত্ত্ব জ্যোতীষশাস্ত্রীয় এবং মানব জীবনের বিভিন্ন দিকে সম্পর্কে বহুকথা বলে যান। বিভিন্ন তথ্য ও ইতিহাস অনুযায়ী খনার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক. অভিন্ন তাই খনার বচনগুলো বাংলায় (তবে মূলভাষার বিবর্তিত রূপ)। তার আর্বিভাব কাল ধারণা করা হয় তিন চার শত বর্ষের মধ্যে হয়েছিল। জীবনের শেষ সময়ে আমাদের কৃষি ও মানব জীবন সম্পর্কে বলা ছড়া ছন্দের আকারে কথা গুলোই খনার বচন নামে পরিচিত।

পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়/ সেই বৎসর বন্যা হয়’, ‘রবি মাসে পায়/ ঝরা কিংবা খরায় যায়’, ‘ডাক ছেড়ে বলে রাবণ/ কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ’, ‘উঠান ভরা লাউ শশা খনা বলে লক্ষীর দশা’, ‘শুনরে বেটা চাষার পোস্ট/ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে হলুদ রো/ আষাঢ় শাওনে নিড়ায়ে মাটি/ ভাদরে নিড়ায়ে করবে খাঁটি।/ হলুদ রোলে অপর সকালে/ সব চেষ্টা যায় বিফলে!’ এই জাতীয় প্রায় একশ বারোটির মত বা তার চেয়েও বেশি বচন আমাদের দেশ কৃষি ও আবহাওয়া সম্পর্কে তিনি মৃত্যুর আগে বলে গেছেন। খনার বচন বাংলা ভাষার অমূল্য সম্পদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখতেলাফ ও ঐক্য
পরবর্তী নিবন্ধবাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নিরলস সাধক