ক্লু লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই

অস্ত্রসহ আটক দুই

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দক্ষতায় ক্লু লেস একটি ছিনতাই মামলার রহস্য উন্মোচিত হল এবং ধরা পড়লো আসামিরা। অথচ মামলাটি করতে ভুক্তভোগী থানায় গেলেও থানা তা গ্রহণ করেনি। পরে আদালতে ফৌজদারি অভিযোগে ঘটনার আদ্যোপান্ত খুলে বলেন তিনি। আদালত অভিযোগটি থানাকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে আদেশ দেন। একই আদেশে মামলাটির রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।
মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল আব্বাসকে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিনি ছিনতাই হওয়া মোবাইলের নম্বর থেকে করা বিকাশ লেনদেনের সূত্র ধরে ক্যাশআউট, সেন্ড মানি ও মোবাইল রিচার্জ করা চারটি নম্বর শনাক্ত করেন। সেখান থেকে শনাক্ত হন চার ব্যক্তি। খুলতে থাকে মামলার রহস্যের জট। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন দুজন। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
পিবিআই সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকার বাসিন্দা রিদওয়ান বায়েজিদ বোস্তামী সংযোগ সড়ক দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। ওই সড়কের ৪ নম্বর ব্রিজের ওপর হঠাৎ তার মোটরসাইকেলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি মোটরসাইকেলে ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ধরে সড়ক থেকে আনুমানিক ১৫ ফুট নিচে নামিয়ে ফেলে। সেখানে ভুক্তভোগীর মোবাইল, পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। এরপর তাকে আটকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। প্রায় দুই ঘণ্টা নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয় তারা। পরে রিদওয়ানকে মারধর করে ফেলে দিয়ে মোটরসাইকেল এবং হেলমেট নিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনায় রিদওয়ান সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করতে যান। তবে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি শুনে এটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন। আদালতের আদেশে সীতাকুণ্ড থানায় ১১ জানুয়ারি একটি দস্যুতার মামলা হয়। ১৬ জানুয়ারি মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, মামলা হাতে পাওয়ার পর তদন্তে দেখা যায় ছিনতাই হওয়া মোবাইল সিমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট করা ছিল। সেটির ট্রানজেকশন (লেনদেন) পর্যালোচনায় দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটি থেকে প্রথমে একবার ৩৫৯ টাকা ক্যাশ আউট করা হয়। একবার পাঁচ হাজার এবং আরেকবার এক হাজার টাকা অন্য একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এছাড়া একবার একটি নম্বরে ৫৯ টাকা রিচার্জও করতে দেখা যায়। বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের এই সূত্রে শনাক্ত করা হয় চারটি নম্বর। সেই নম্বরগুলো থেকে শনাক্ত হন চারজন ব্যক্তি। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার দুদিন পর ১৮ জানুয়ারি আশরাফুল ইসলাম (২২) নামে এক যুবককে নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া জসিমের ভাড়া ঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশরাফকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেন। এরপর তাকে নিয়ে গত রোববার দিবাগত রাতে মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে মেশকাত উদ্দিন (২৫) নামে এক আসামি পালিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করা হয় রাহাদ উদ্দিন (২৪) নামে একজনকে। এ সময় তার বাড়ি থেকে একটি দেশে তৈরি রাইফেল, দুই রাউন্ড গুলি, এক রাউন্ড গুলির খোসাসহ নানারকম দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামাল আব্বাস বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মীরসরাই থানায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আশরাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফখরুল-অলির বৈঠক আসতে পারে নতুন ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধকাভার্ডভ্যান থেকে কাপড়ের রোল চুরি