ক্রেতার ভিড় দেখে বাড়তি দাম

সমান ওজনের গরুর দামে পার্থক্য

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৯ জুলাই, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

সাগরিকা বাজার থেকে গতকাল সন্ধ্যায় দুই লাখ টাকায় আনুমানিক ৮ মণ জনের একটি গরু কিনেন কাতার প্রবাসী মোহাম্মদ হোসাইন। একই বাজারে আবার আকবর মামার মাঠে ২০ হাজার টাকা মণ হিসেবেও (ওজন স্কেলে পরিমাপ) গরু বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসেবে আট মণ ওজনের গরু দাম এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ একই বাজারের তুলনা করলে ক্রেতা হোসাইন ৪০ হাজার টাকা বেশি দামে কিনেছেন! কেবল সাগরিকা বাজার নয়। অন্যান্য বাজারেও একই অবস্থা। অবশ্য সব বাজারে ওজন স্কেলে গরু বিক্রি হচ্ছে না। তবে সেখানেও আনুমানিক সমান ওজনের গরুর দামে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। এক বাজারের সাথে অন্য বাজারেও এরকম দামের ভিন্নতা দেখা গেছে।
গরুর দামের এ পার্থক্য দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, কেউ গরু কিনে, কেউ দড়ি কিনে। অর্থাৎ দামের হিসেবে কেউ ঠকেন কেউ বা জিতেন। গত ৮ দিন ধরে নগরের কোরবানি পশুর হাটগুলোতে এ চিত্র দেখা গেছে। আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ শনিবার বেচাকেনার শেষ দিন। তবে বেশিরভাগ কোরবানিদাতা আজকের বাজারের অপেক্ষায় নাই। গত মধ্যরাত পর্যন্ত বাজার ঘুরে ঘুরে কিনেছেন পছন্দের গরু। গতকাল শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় দুপুরের পর থেকেই বাজারে ভিড় করেন তারা। কোনো কোনো বাজারে ক্রেতার ভিড় দেখে বেপারিরা কৌশলে গরুর দাম বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আগের দিন যে গরুর দাম এক লাখ টাকা হাঁকা হয় গতকাল তা কমপক্ষে ২০ হাজার বাড়িয়ে দাবি করেন বেপারিরা। কোরবানি উপলক্ষে এবার নগরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থায় সাতটি পশুর হাট ইজারা দেয়। এর মধ্যে চারটি অস্থায়ী। এগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার, পতেঙ্গা লিংক রোড সংলগ্ন খেজুর তলা মাঠ এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের পাশে। এ ছাড়া আছে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অবশ্য বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের মাঠের অস্থায়ী বাজারটির
ইজারাদার তাদের টাকা ফেরত চায় চসিকের কাছে।
এবার নগরের কোরবানি পশুর হাটগুলোতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য জেলা থেকে গরু আনেন বেপারিরা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে গরু আনা হয় বিক্রির জন্য। গরুর পাশাপাশি বাজারে মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দেখা গেছে।
গতকাল সাগরিকা বাজারে বোয়ালখালী থেকে নিয়ে আসা ‘বড় মিয়া’ নামে ১৮-১৯ মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকা হয় ১২ লাখ টাকা। শেষ দিনে এসে সাত লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন বলে জানান বিক্রেতা। কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসা এক হাজার ২০০ কেজি ওজনের গরুর দাম হাঁকা হয় সাত লাখ টাকা। ভারতীয় সাদা রঙের ১১ মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকা হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। তবে চার লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন বলে জানান বিক্রেতা ফিরোজ। এ বাজারে কুষ্টিয়া থেকে আনা ৮ মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে দুই লাখ টাকায়। মাগুরা থেকে নিয়ে আসা একটি গরুর নাম রাখা হয় ‘সাকিব আল হাসান’। ৩০ মণ ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হয় ৮ লাখ টাকা।
সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমাদের বাজারে পর্যাপ্ত গরু আছে। সংকট নাই। ক্রেতাও প্রচুর। দামও সহনীয়। তবে আশেপাশের অবৈধভাবে গড়ে উঠা বাজারের প্রভাব পড়েছে। অবৈধ বাজারগুলোকে উচ্ছেদ করেনি। সিটি কর্পোরেশন কেবল জরিমানা করে দায় সেরেছে।
বিবিরিহাট গরুর বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি রেজাউল করিম রিটন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। আজও (গতকাল শুক্রবার) বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে গরু কম মনে হচ্ছে। আগে যেভাবে মুরাদপুর পর্যন্ত গরু উঠত এবার তেমন নাই। গরু কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার অসংখ্য এগ্রো ফার্ম দেখা যাচ্ছে। এদের অনেকের হয়তো ২০-৩০টি গরু ছিল। কিন্তু কোরবানি উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু সংগ্রহ করে তা নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় এগ্রো ফার্মকে ঘিরে অবৈধ বাজার বসে গেছে। বাইরে থেকে যারা গরু আনে তারা সেখানে যাচ্ছে। এজন্য বাজারে গরু কম মনে হচ্ছে।
বাজারে সংকটের পেছনে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, সেটা বুঝতে পারছি না। তবে আজ সন্ধ্যায় আমার বাজারে চার গাড়ি গরু এসেছে। সাধারণত এ সময়ে গরু আসে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলম্বোয় কারফিউ, ছাত্র বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধসুরকার আলম খানের চিরবিদায়