নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এনে নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগে ভাইরাল শারমিন শিলা ওরফে ক্রিম আপাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাভার পৌর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান। খবর বাংলানিউজের।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাভারের আশুলিয়ায় বিউটিশিয়ান হিসাবে কাজ করে বসবাস করে আসছিলেন শারমিন সুলতানা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিম আপা নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তিনি মেকআপের কাজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি নিজের শিশু ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে পোস্ট দেন। সম্প্রতি গত ৩০ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে বিকেল চারটার দিকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি, যা রীতিমতো ভাইরাল হয়। সেই ভাইরাল ভিডিওতে শারমিন শিলা তার ছোট্ট মেয়ের মুখে চাপ দিয়ে জোর করে হাঁ করিয়ে কেক জাতীয় কিছু খেতে বাধ্য করছেন। তিনি ভাইরাল হওয়ার জন্য এক বছর ধরে দুই শিশুসন্তানের প্রতি মাতৃসুলভ আচরণ না করে আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলাসহ তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ ধরনের আচরণের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া শারমিন শিলা ভিউ পেতে বা অনলাইনে টাকা আয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এনে নানাভাবে নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে আজ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার ‘একাই একশ’ নামে শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমানসহ অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিনদিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন বলেন, শিশু আইনের ৭০ ধারায় শারমিন শিলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তার বিরুদ্ধে শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন ও অশালীনভাবে প্রদর্শন করার অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
তার দুই সন্তান এখন কার তত্ত্বাবধানে থাকবে প্রশ্নে তিনি বলেন, তার শিশুসন্তানদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমার জানা নাই। আমরা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আদালতে পাঠালে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে মা ছাড়া তার সন্তানরা কোথায় থাকবে।
প্রসঙ্গত, আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রিম আপা বিউটি পার্লার’ নামে শারমিন শিলার একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। এছাড়া তিনি ক্রিম তৈরি, ব্যবহারের পদ্ধতিসহ নানা ধরনের ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন।