ক্রাশ প্রোগ্রামসহ নানা কর্মসূচি চসিকের

করণীয় নির্ধারণ করল মন্ত্রণালয়ও

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ক্রাশ প্রোগ্রামসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কর্মসূচিতে জনসচেতনতা সৃষ্টির উপর জোর দেয়া হবে। বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এদিকে চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর জন্য মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে নানা করণীয় ঠিক করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। করণীয়গুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনগুলোর কাছে নির্দেশনা পাঠানোর কথা রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চট্টগ্রামেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ জন রোগী শনাক্ত হয়। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সামনে বৃষ্টি হলে প্রার্দুভাব আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় চসিক নগরবাসীর সুরক্ষায় মাঠে নামছে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বিতরণের জন্য সচেতনতামূলক এক লক্ষ লিফলেট ছাপানো হচ্ছে। এছাড়া কর্মসূচির আওতায় মাইকিং করা হবে পুরো শহরে। নগরের প্রতিটি মসজিদের ইমামের মাধ্যমে এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসানালয়েও প্রচারণা চালানো হবে। এতে প্রত্যেকে যেন নিজ বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখে সে আহবান থাকবে। এছাড়া নিয়মিত স্প্রে ম্যানের পাশাপাশি ৬টি বিশেষ দল এবং একটি সেশাল টিম গঠন করা হচ্ছে। তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কীটনাশক ছিটাবে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে আর্বান কমিউনিটি ভলেন্টিয়ারকে দিয়ে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ও জনসচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে তা শুরু হবে। আজও (গতকাল) বিষয়টি নিয়ে বসেছি। ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার জন্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে চসিকের বর্জ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনায় ক্রাশ প্রোগ্রামের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

মন্ত্রণালয়ের করণীয় নির্ধারণ :
সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য দ্বিতীয় আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয় গত জুন মাসে। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত হয় সভাটির কার্যবিবরণী। মূলত ওই সভায় চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশনের জন্য করণীয় ঠিক করা হয়। করণীয়গুলোর মধ্যে আছে- কর্পোরেশনকে মশক নিধনে ব্যবহৃত কার্যকর কীটনাশক এবং যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা। করণীয়গুলোর মধ্যে জনসচেতনতা তৈরির উপর জোর দেয়া হয়। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সাব-জোনে ভাগ করতে হবে। এরপর সকল শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পক্ত করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। গঠিত কমিটির তালিকা স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচারসহ অন্যান্য প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাসা-বাড়িতে লার্ভা জন্মানোর উপযোগী স্থানে বাসিন্দাগণ যাতে স্ব-উদ্যোগে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় সে জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ জনগণ ও পরিবেশর জন্য যাতে ক্ষতিকর না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেসব ছাদবাগান অপরিষ্কার রয়েছে সেখানে ফুলের টবের পানিতে লার্ভা দমন প্রতিরোধে নিয়মিত কেরোসিন দেয়ার জন্য প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা যেন এডিশ মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও করণীয় ঠিক করা হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, ইচ্ছেকৃতভাবে এডিস মশার প্রজননের জন্য দায়ি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সনাক্তকৃত ডেঙ্গু রোগীর সঠিক ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তরসমূহকে কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহ এবং অন্যান্য বেসরকারি দপ্তরের আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনায় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নত বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থা প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনসমূহের সাথে সমনবয় রাখবে এবং প্রয়োজনে সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য কর্পোরেশনগুলোর চাহিদা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করতে হবে বলেও করণীতেও উল্লেখ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘পাহাড়খেকো’ ইয়াছিন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত