ক্রাইম পেট্রোল সিআইডির প্রভাব বাস্তব জীবনে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ তথা বিশ্বজুড়েই ব্যাপক জনপ্রিয় অপরাধ বিষয়ক তথ্যচিত্র। কিন্তু এ ধরনের তথ্যচিত্র বিশেষ করে ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি, ক্রাইম পেট্রোলের মত অনুষ্ঠান দেখে অনেকে অপরাধ কৌশল রপ্ত করছে ঘরে বসেই। আবার অবুঝ শিশু-কিশোরদের অনেকে সিরিয়ালের চরিত্রকে অনুকরণ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অপরাধ বিষয়ক এসব সিরিয়ালে খুন, ধর্ষণ ও অপহরণের মত ঘটনা অভিনয় আর উপস্থাপকের বর্ণনায় তুলে ধরা হয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে।
পুলিশ, ঘটনার সাক্ষী, পরিবার, ঘটনার শিকার ব্যক্তি-এরকম বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা হয় অনুষ্ঠানগুলো। খুনের ঘটনার বর্ণনায় কীভাবে খুন করতে হবে, কীভাবে দেহ টুকরো করতে হবে, কীভাবে বডি লুকাতে হবে এবং কীভাবে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে হবে-এসবই দেখানো হয় তথ্যচিত্রে; যা একদিকে মানুষকে কৌতূহলী করে তোলে, অন্যদিকে করে তোলে অপরাধপ্রবণ। বিষয়টির সাথে একমত পোষণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। দৈনিক আজাদীকে তিনি বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয় এর অন্যতম কারণ। সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে, যদি প্রতিকার করতে হয়। সিরিয়ালে তারা হয়তো এসব ঘটনা প্রতিকারের জন্যই দেখাচ্ছে। কিন্তু এসব সিরিয়াল মানুষের মধ্যে ভালোর পরিবর্তে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। এজন্য কতিপয় মিডিয়া দায় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, এসব সিরিয়াল দেখে মানুষ অপরাধের দিকে ঝুঁকছে। আর অপরাধ জীবনে একবার পা বাড়ালে সে অপরাধ করতেই থাকে। কারণ বিচার প্রক্রিয়াটা তার জানা হয়ে যায়। যেখানে কমবেশি সবার মধ্যেই অপরাধ প্রবণতা রয়েছে, সেখানে অপরাধ কৌশল মঞ্চস্থ করে মানুষের ভেতরকার অপরাধ প্রবণতাকে আরও জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। এর প্রতিকারে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। সরকারের পক্ষে একা এটা করা সম্ভব নয়, সামাজিক সচেতনতাও জরুরি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর নিউ মনছুরাবাদ কসাই পাড়া এলাকার একটি ভবন থেকে শাহাদাত হোসেন (৮) নামে এক শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আকবর শাহ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের আগে শিশুটির মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটা একটা এঙিডেন্ট। তিনি বলেন, ওই শিশুর বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়েছে। তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। নতুন বাবা পিকআপ চালক। তিনি গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যান। তার মা গার্মেন্টসকর্মী। শিশুটি বাসায় একা থাকে।
শিশুটির মা পুলিশকে জানিয়েছে, শাহাদাতের সময় কাটত টেলিভিশনে সিআইডি, ক্রাইম পেট্রোল আর মোটু পাতলু দেখে। ওসি জহির বলেন, শিশুটির মরদেহের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, কৌতূহলের বশে জানালায় প্যাঁচানো গামছায় সে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। আর ওই অবস্থাতে ঝুলতে গিয়ে তার পা ফসকে যায়। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় আলোচিত মা-ছেলে খুনের একমাত্র আসামি ফারুককে গত ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, কখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে, কখনো রাজধানীতে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। মোবাইল ব্যবহার করতেন না, কারণ পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে। টিভি সিরিয়াল সিআইডি ও ক্রাইম পেট্রোল দেখে তিনি হত্যার কৌশল শেখেন। গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশলও শেখেন সেখান থেকে। কিন্তু র‌্যাব-৭ এর ট্র্যাকিং এড়াতে পারেননি শেষ পর্যন্ত।
জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক স্বীকার করেন, রাগের মাথায় ‘পাতানো বোন’ গুলনাহার বেগমকে খুন করেন এবং খুনের ঘটনা দেখে ফেলায় ছেলে রিফাতকেও খুন করেন তিনি। তিনি একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানান।
এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ফরহাদ হোসেন লিমন (২২) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তিনি টাকা না পেয়ে ভাবিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং ঘটনাটি চুরির নাটক হিসেবে সাজানোর চেষ্টা করেন। ক্রাইম পেট্রোল দেখে তিনি এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। তার দাবি, ভাবির কাছে টাকা চেয়ে পাইনি, তাই তাকে খুন করে স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি জিনিসপত্র চুরি করেছি।
নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকার তালাবদ্ধ বাসা থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনা প্রসঙ্গে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জানিয়েছিলেন, ফরহাদ হোসেন লিমন নিয়মিত ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখতেন। ক্রাইম পেট্রোলে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের কেস স্টাডি দেখানো হয়। তা দেখে ভাবিকে খুন করে ঘটনাটি চুরি হিসেবে সাজাতে চেষ্টা করেন লিমন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে হোটেল কক্ষে ব্যবসায়ীর লাশ
পরবর্তী নিবন্ধদেশে আরও ১৪ জনের মৃত্যু