কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় আটক হওয়ার পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের। আইএসপিআর এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তৌহিদুল ইসলামকে (৪০) আটক করে যৌথবাহিনী। পরে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেনা কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয় জানিয়ে আইএসপিআর বলছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মৃত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু শুক্রবার বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তাদের ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে, আপনারা হাসপাতালে আসেন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। সেখান থেকে পুলিশ প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, অতিরিক্ত মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে– এটা বলাই যায়। যতদূর জানি তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ঘটনার বর্ণায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তানভির আহমেদ বলেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম বলেছেন, যৌথ বাহিনী আমাদের শুক্রবার বেলা ১১টায় জানায়, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন ‘গোমতী বিলাসে’ একজন আহত অবস্থায় আছে। পরে সেখান পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দ্রুত তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার : কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর যুবদল নেতা তৌহিদের মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কুমিল্লায় পুলিশ গত রাতে এক যুবক, তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার ভোরে তার বাড়ি থেকে আটক করার পর তাকে নির্যাতন করে। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে সরকারে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলেও জানানো হয়।
লাশ নিয়ে কুমিল্লায় বিক্ষোভ : কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের পর মারা যাওয়া যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের লাশ নিয়ে দোষীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা ও আশপাশের গ্রামের মানুষ কুমিল্লা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এসে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বেলা ১২টার দিকে যুবদল নেতা তৌহিদের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে জনতা সেখানে আসেন। এ সময় তারা তৌহিদুলের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
এ সময় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন, আমার চারটি মেয়ে। তারা চিরদিনের মত এতিম হয়ে গেল। যারা আমার স্বামীকে মেরেছে তাদের কি মা নাই, বোন নাই? তারা কেন ওকে মারল– আমার এটাই প্রশ্ন। আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই।
রিজভীর প্রশ্ন : বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, শঙ্কা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লার যুবদলের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে মৃত ফেরত দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদি ওই ছেলেটি অপরাধী হয় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু গ্রেপ্তার করে ভয়াবহ টর্চার করে মেরে বাবা–মার কাছে ফেরত দেওয়া– এই আমলে হবে কেন।
শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন রিজভী।