ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায় সুখবর চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বড় পাওয়া

| বৃহস্পতিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রামে ক্যানসার রোগী বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। ২০২১ সালে ক্যানসার আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩ জন। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬২৬। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রোগী প্রতিবছর বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি। ছোটখাটো সমস্যাকে বড় হতে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসকদের মতে, রোগীদের সম্ভাব্য কারণের মধ্যে অসচেতনতা এবং জিনগত ব্যাপার থাকতে পারে। আর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে ধূমপান, জর্দা, তামাকজাতীয় দ্রব্যসহ নানা কারণে মুখগহ্বর, গলা ও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

চট্টগ্রাম জেলার ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার জন্য হাসপাতালে রয়েছে মাত্র কয়েকটি ক্যানসার বেড। অথচ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। বিত্তবানরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী এবং দেশের বাইরে ছুটে যেতে পারলেও সাধারণ রোগীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই স্বল্পআয়ের মানুষ সুযোগের অভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। তবে দিন দিন প্রয়োজন বিবেচনায় চিকিৎসা সেবায় উন্নতি ঘটছে। দৈনিক আজাদীতে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ক্যানসারের চিকিৎসায় সুখবর এসেছে চমেক হাসপাতালে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে কেমো থেরাপি দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের (সার্জারি) প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ক্যানসার বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়লে কেমো থেরাপি আর কাজ করে না। আর বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অপারেশনও করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসাবিদ্যায় এ ধরনের রোগীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের রোগী হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এ ধরনের রোগীদের সুস্থ হওয়ার আশা তেমন একটা থাকে না বললেই চলে।

কেমো কাজ না করা এবং অপারেশন করা সম্ভব নয়, এমন ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হচ্ছে মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি। অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি বিশেষ করে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের ক্ষেত্রে সুফল দিচ্ছে বলে চিকিৎসকরা দাবি করেছেন। গত রোববার এমনই দুজন লিভার ক্যান্সারের রোগীকে এই মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) বিভাগে। সরকারি পর্যায়ে কোনো হাসপাতালে এই থেরাপির প্রয়োগ এটিই প্রথম বলে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পর্যায়ে দেশের কোন হাসপাতালে এই থেরাপির প্রয়োগ এখনো চালু হয়নি। বেসরকারি পর্যায়েও রাজধানী ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে এই থেরাপি চালু আছে। সে হিসেবে সরকারি পর্যায়ে সারাদেশে একমাত্র চমেক হাসপাতালেই প্রথমবারের মতো এই মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হল।

চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যানসারের যেসব রোগীদের কেমো থেরাপিতে আর কাজ করে না এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে অপারেশন করে টিউমার অপসারণ করা সম্ভব হয় না, সেসব জটিল রোগীদের এই মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই থেরাপির মাধ্যমে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে থাকা টিউমার বা ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া কোষ শনাক্ত করে তা পুড়িয়ে দিয়ে ধ্বংস করা হয়ে থাকে। সিটি সিমুলেটর নামে ক্যান্সারের অত্যাধুনিক একটি মেশিনের মাধ্যমে এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। মেশিনটির দাম ৮ কোটি টাকার কম নয়। ঢাকার বাইরে চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে এই সিটি সিমুলেটর মেশিন সচল রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে এখন কমপক্ষে এক হাজার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দরকার। সেখানে বর্তমানে ২০০ থেকে ২৫০ জান চিকিৎসক রয়েছেন। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজইউএইসসি) লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিশেষজ্ঞ ক্যানসার চিকিৎসক তৈরির প্রতি নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি)-৩ এর আওতায় সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্যাকেজ অনুযায়ী ক্যানসারের মতো বড় রোগগুলোর চিকিৎসায় সরকারি সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সবাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ক্যানসার রোগীদের ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়, কিন্তু কিভাবে সেই সহায়তা পাওয়া যায় সেটা অনেক রোগীর পরিবারই জানেন না।

তাঁরা বলেন, দেশে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ এখনও অনেক কম। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বেশ বড়। এর বাইরে পুরোনো মেডিকেল কলেজগুলোতে ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। কিন্তু নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে এই সুযোগ অনেকটাই কম। এর বাইরে আট বিভাগে একটি করে বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল করার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে, সেটি বাস্তাবায়ন এখনও শুরু হয়নি। ফলে রোগীর তুলনায় সক্ষমতা অনেক কম।

সেই জায়গায় চমেক হাসপাতালে সরকারি পর্যায়ে মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি চালুর বিষয়টি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বিশাল এক পাওয়া। জানা যায়, ঢাকা থেকে আনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এখানেও বেশ কয়জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হবে। এ ব্যাপারে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, নিজেদের চিকিৎসকরা প্রশিক্ষিত হয়ে দক্ষ হয়ে উঠলে স্থায়ী এবং ধারাবাহিকভাবে এখানে এই মাইক্রো ওয়েভ এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন থেরাপি চালু রাখা সম্ভব হবে।

আমরা এমন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে